বিজ্ঞাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের খরস্রোতা বাসিয়া নদী আজ বিলীন হওয়ার পথে। এক সময় এ নদী দিয়ে লঞ্চ, ইঞ্জিনের নৌকা, পালতোলা নৌকা, বালু-পাথরবাহী চলাচল করতো। কিন্তু বর্তমানে নদীটি অবৈধ দখলে, ময়লা- আবর্জনায় ধীরে ধীরে খালে পরিণত হয়েছে। এখন নদীটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।
জানা যায়, প্রায় ২০০ ফুট প্রশস্তের বাসিয়া নদী একসময় চারটি উপজেলায় ৪২ কিলোমিটার জনপদের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা নদী ছিল। নদীটি সুরমা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা, বিশ্বনাথ উপজেলা, উসমানীনগর উপজেলা, জগন্নাথপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়েছে। এ নদীর সঙ্গে অসংখ্য খাল, বিল, হাওর ও ছোট-বড় নদীর সংযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) তথ্যমতে, প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার মানুষের যাতায়াতের মূল পথ ছিল বাসিয়া নদীর জলপথ। আজ এই বাসিয়া নদীটি নাব্য হারিয়ে মরা খাল বা ড্রেনে পরিণত হয়েছে। বাসিয়া নদীর তীরে গড়ে ওঠা গঞ্জ বা বাজারের অধিকাংশ অবৈধভাবে দখল করে কলকারখানা, হোটেল, কেমিক্যাল কারখানার অট্টালিকা ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রভাবশালী মহল নদীর দুই তীর দখল করে ৫-৬ তলা ভবন নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে।
আরো জানা যায়, বাসিয়া নদীর তীরে গড়ে উঠেছে মাসুদগঞ্জ বাজার, কামালবাজার, মুনশীবাজার, লালাবাজার, বিশ্বনাথ, কালিগঞ্জবাজার, গুদামঘাট, কোনারাইবাজার, রানীগঞ্জ, জামালপুরবাজার। প্রতিটি হাট-বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদীটিকে ড্রেন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে নদীটি গভীরতা হারিয়ে এখন মাত্র ৬০ থেকে ১০০ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি তালিকামতে, ৫০০ মিটারের মধ্যে ১৬০টি, তিন কিলোমিটারের মধ্যে মোট ১৮৬টি অবৈধ স্থাপনা দৃশ্যমান আছে। অন্যদিকে বাসিয়া নদীর সুরমা নদী থেকে উৎপত্তিস্থলের মুখ এবং শেষে কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে মিলিত হওয়া মুখ পলি মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে অনেকে ওই দুই মুখে অবৈধভাবে স্থায়ী ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছে। এ কারণে নদীর স্রোত হারিয়ে গেছে। এই নদীর সঙ্গে অনেক ছোট-বড় নদী, হাওর, বিল, খাল সংযোগ রয়েছে। বাসিয়া নদীর অংশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দি হয়ে পড়ে অসংখ্য মানুষ। শীত মৌসুমে পানির অভাবে কৃষিজমি পরিণত হয় মরুভূমিতে।
অন্যদিকে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে নদীর মধ্যভাগে পলি মাটি জমে নদীর তীর ও তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। নদীটিতে ২০১৩-১৫ সালে সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ কিলোমিটার খননকাজ করেছে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ১৮ কিলোমিটারের শেষ মাথায় বিশ্বনাথ বাজারের অবৈধ স্থাপনা থাকায় খননকাজ সম্পন্ন করা যায়নি। ২০১৬ সালে আবার জলবায়ু পরিবর্তন ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ২ কোটি টাকা বরাদ্দে ৭ কিলোমিটার খননকাজ হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড আবার বিশ্বনাথ বাজার বাদ দিয়ে খননকাজ শুরু করলে ৬ কিলোমিটার কাজ করা সম্ভব হয়। কিন্তু বিশ্বনাথ বাজারে অবৈধ স্থাপনা থাকার কারণে ১ কিলোমিটার খননকাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের জানান, বিশ্বনাথ অংশে উচ্ছেদ মামলা দায়ের করা হলেও দখলকারীরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছেনা।
তিনি আরো জানান, বিশ্বনাথ অংশে আর কেউ যাতে উচ্ছেদ না করতে পারে এজন্য প্রশাসন লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এছাড়াও নদীতে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে পৌরসভা থেকে নির্ধারিত ময়লা ফেলার স্থানও করে দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ আন্দোলন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, বাসিয়া নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রশাসন আন্তরিক নয়। প্রশাসনের উদাসীনতায় বার বার উদ্যোগ গ্রহণ করেও উচ্ছেদ সম্ভব হয়না। তিনি নদীটি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি এগিয়ে আসার আহবান জানান।