Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: রবিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-10-03T14:15:59Z
সিলেট

সিলেটে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে অজগর !

বিজ্ঞাপন

ডেস্ক রিপোর্ট : শুক্রবার রাতে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রাবেয়া বেগমের বাসার সদস্যরা। সিলেট নগরের পাশে মেজরটিলা এলাকায় তাদের বাসা। হঠাৎ করেই এক ভাড়াটিয়ার চিৎকারে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন সকলে।

রাবেয়া বেগম বলেন, ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখতে পাই বারান্দায় একটি অজগর সাপ। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করছে। তখন আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে এটি মারতে উদ্যোত হয়েছিলো। আমি তাদের নিবৃত্ত করে কৌশলে সাপটি বস্তায় ভরে ফেলি। পরে বনবিভাগকে খবর দিলে তারা এসে সাপটি নিয়ে যান।

এই প্রথম নয়, গত ছয়মাসে তার বাড়িতে তিনটি অজগর পাওয়া গেছে বলে জানান রাবেয়া। আগের দুটি অজগর স্থানীয়রা মেরে ফেলেছেন বলেও জানান তিনি।  

গত ১৩ সেপ্টেম্বর একইভাবে সিলেটের শাহপরান এলাকার একটি বাড়ি থেকে ৩০ কেজি ওজনের একটি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়।

বাড়ির লোকজন ঘরের মধ্যে সাপটি দেখতে পেয়ে পুলিশের জরুরী সেবা নাম্বার ৯৯৯-এ কল দেন। এরপর পুলিশ ও বনবিভাগ ঘটনাস্থলে গিয়ে সাপটি উদ্ধার করে।

এরআগে গত ২১ মে সিলেটের উত্তর বালুচর এলাকার মিল্টু মালাকারের বাড়ির উঠান থেকে একটি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর সাপটি স্থানীয় খাদিম নগর জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করে বনবিভাগ।

কেবল এই কয়েকটি নয়, সিলেটে প্রায়ই বিভিন্ন বাড়িঘর ও লোকালয় থেকে উদ্ধার করা হয় অজগর সাপ। সাম্প্রতিক সময়ে যা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক সময় আবার স্থানীয়রা পিটিয়ে মেরেও ফেলেন অজগর।

শুক্রবার রাতে যার বাসা থেকে অজগর উদ্ধার হয়েছিলো সেই রাবেয়া বেগমও বললেন, এরআগে বাড়ির মধ্যে পাওয়া দুটি অজগর স্থানীয়রা মেরে মাটিচাপা দিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, অজগর সাপ প্রায়ই এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে প্রবেশ করে হাঁস-মুরগী খেয়ে ফেলে। এতে মানুষজন অতিষ্ঠ। আমি নিজে দেশিয় মুরগীর একটি খামার করেছি। এখন প্রায়ই আমার বাড়িতে অজগর ঢুকে পড়ে। তাই সবসময় ভয়ে থাকি।

বনের ভেতরে খাবার কমে যাওয়া ও নির্বিচারে বন ধ্বংস করার ফলে অজগর সাপ লোকালয়ে ও বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে বলে মনে করেন পরিবেশবাদী সংগঠন ভ’মিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির।

শুক্রবার রাতে বাড়িতে অজগর উদ্ধারের খবর পেয়ে তিনিও ছুটে যান মেজরটিলায়। এরপর বন বিভাগের কর্মীদের সাথে মিলে তা উদ্ধার করেন।

আশরাফুল কবির বলেন, বনের ভেতরে অজগরের খাবার কমে আসছে। অনেকক্ষেত্রে বনই ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। ফলে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসছে অজগর। যেসব বাড়িতে হাঁস-মুরগী আছে তাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ছে।

তিনি বলেন, বনের কাছাকাছি বাড়িগুলোতে অজগর বেশি আসছে। আগে এসব এলাকায় মুলত বন-জঙ্গলই ছিলো। এখন বন ধ্বংস করে আবাসন গড়ে উঠেছে। ফলে অজগরের বাসস্থান ও খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

সিলেট অজগরের ‘হটস্পট’ বলে মনে করেন বন বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) এসএম সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, সিলেট অঞ্চলে প্রচুর অজগর সাপ রয়েছে। বিশেষত এখানকার চা বাগানগুলো অজগরের নিরাপদ আশ্রয়।

ঈদানীং অজগরের লোকালয়ে চলে আসার প্রবণতা বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন প্রায় সপ্তাহেই দু’একজন ফোন করে অজগর পাওয়া যাওয়ার কথা জানায়। পরে আমরা উদ্ধার করে নিয়ে আসি।

বাড়িঘরে অজগরের ঢুকে পড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে চা বাগানগুলোর ভেতরে অনেক বনমোরগ ও কাঠবিড়ালি পাওয়া যেতো। এগুলো ছিলো অজগরের প্রিয় খাদ্য। কিন্তু এসব এখন কমে গেছে। ফলে অজগর খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। ফলে বন ও চা বাগানের আশপাশের বাড়িতে, যেগুলোতে হাঁসমুরগী আছে, সেসব বাড়িতে অনেক সময় অজগর ঢুকে পড়ে।

অনেক অজগর বনের বাইরে এসে বাচ্চা প্রসব করে জনিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি লোকালয় থেকে আমরা বেশকিছু বাচ্চা অজগর উদ্ধার করেছি। এতে বুঝা যায় মা অজগর আশপাশে কোথাও এসে প্রসব করেছে।

তবে অজগর বাড়িতে ঢুকে পড়লেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, অজগর খুবই নীরিহ ও বিষহীন সাপ। নিজে আক্রান্ত না হলে সে কাউকে কামড় দেয় না। আবার কামড় দিলেও বিষক্রিয়া হওয়ার শঙ্কা নেই। কেবল ঘরের হাঁস-মুরগী লুকিয়ে রাখতে পারলে এই সাপ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।

তাই অজগর ঘরে প্রবেশ করলেও হত্যা না করে বনবিভাগকে খবর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

তথ্য সূত্রে : SylhetToday24

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ