বিজ্ঞাপন
মিসবাহ উদ্দিন : গত কয়েক বছর ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরশহরের প্রথম নাথ দাস রোড (কলেজ রোড) ব্যবহারকারী জনসাধারণ, পথচারী ও যানবাহন চালকদের।
প্রায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তা। প্রথম সাড়ে চারশ ফুট আরসিসি ঢালাই করা এবং শেষ সাড়ে সাত কিলোমিটার রাস্তা পিচ ঢালাই করা। কিন্তু মধ্যখানে মাত্র একশ মিটার অংশ ভাঙ্গাচুরা ও খানাখন্দে ভরপুর। আর সামান্য এই ভাঙায় রাস্তার এই চিত্র বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়কের বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রমথ নাথ দাস রোড অংশের।
এই সড়ক দিয়ে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ প্রায় কয়েক লক্ষাধিক মানুষের প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় রাস্তটি বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে। অথচ সামান্য এই রাস্তাটির সংস্কার করা নিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রকৌশল অফিস ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঠেলাঠেলি চলছে।
জানা গেছে, বিয়ানীবাজার পৌরশহরের প্রধান রাস্তা থেকে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ফটক পর্যন্ত প্রমথ নাথ দাস সড়কের প্রায় ৪৫০ মিটার আরসিসি ঢালাই করেছে পৌরসভা। অন্যদিকে, বিয়ানীবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিলপাড়া ইটভাটা পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার রাস্তা দুই ভাগে সংস্কার করেছে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ। কিন্তু এই অংশের মধ্যখানে মাত্র ১০০ মিটার রাস্তার অবস্থা গত কয়েক বছর ধরে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটির ক্ষতিগ্রস্থ অংশটুকু সংস্কারে এগিয়ে আসতে দীর্ঘদিন ধরেই বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রকৌশল অফিস ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অবহেলা করে আসছে।
ফলে এ রাস্তাটিও দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে বর্ষা মৌসুমে পানি জমে ছোটখাটো ডোবায় পরিনত হয়। সেকারণে প্রতিদিন পৌরসভার একাংশ, মাথিউরা ও তিলপাড়া ইউনিয়নসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাছাড়া বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কলেজ মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা-যাওয়া করা স্থানীয় মুসল্লিদেরও ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়।
অনার্স পড়ুয়া কলেজ শিক্ষার্থী তাহমিনা ফেরদৌস বলেন, রাস্তাটি দিয়ে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া করতে হয়। রাস্তাটির মাত্র ১০০ মিটার অংশের এমন বেহাল দশার কারণে দীর্ঘদিন থেকে আমাদেরকে অনেক বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি-বাদলে রাস্তাটির অবস্থায় বেশি বেহাল হয়ে পড়ে। এতে চলাচলে আমাদেরকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
রুনু মিয়া নামে এক সিএনজি অটোরিকশা চালক বলেন, রাস্তাটি আগে-পরের সবটুকু রাস্তাই ভালো কিন্তু কলেজ রোডের মাত্র একশ/দেড়শ মিটার রাস্তায় গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে আমাদের চালকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক সময় খানাখন্দে গাড়ির চাকা আটকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যায়। তাছাড়া রাস্তাটি অতিক্রম করতে গেলে খানাখন্দে জমে থাকা পানিতে গাড়ির চাকার চাপে ময়লা পানিতে পথচারীদের পোষাকে পড়ে যায়। এসব কারণে পথচারীদের কাছ থেকে অনেক সময় যান চালকদের গালিগালাজ শুনতে হয়।
মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা মো. কামাল হোসেন আল মাথহুরী বলেন, আমি বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ মসজিদের একজন নিয়মিত মুসল্লি। নামাজ আদায় করতে মসজিদে যেতে হলে সাধারণ মুসল্লিদের ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত কাঁদা-জল মাড়িয়ে যেতে হয়। এতে ওযু ছুটে যাওয়ার পাশাপাশি পোষাক-পরিচ্ছদও নোংরা হয়ে যায়। তিনি রাস্তার সামান্য এই অংশটুকু দ্রুত সময়তের মধ্যে সংস্কার করে দিতে সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার পৌরসভা মেয়র মো. আব্দুস শুকুর বলেন, কলেজ ফটক থেকে বালিকা স্কুল পর্যন্ত প্রায় একশ মিটার রাস্তা এলজিইডির। যেহেতু রাস্তাটি এলজিইডির সেহেতু রাস্তাটি তাদের মেরামত করে দেয়ার কথা। তিনি বলেন, দ্রুত রাস্তাটি মেরামত করে দিতে ইতোমধ্যে আমরা স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছি। তারপরও যদি তারা রাস্তাটি সংস্কার না করে তাহলে কোনো প্রজেক্টের আওতায় রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।
রাস্তাটি এলজিইডির হলেও বিয়ানীবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সংস্কারের জন্য টেন্ডার আহবান করেছে জানিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রাস্তাটি সংস্কার কথা। কিন্তু তারা যদি সংস্কারে অনাগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে জনদুর্ভোগ লাগবে আমরা শীঘ্রই একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে রাস্তাটি সংস্কার করে দিবো।