বিজ্ঞাপন
ছবি : শ্রীপুর চা-বাগান ঝরনা। |
ডেস্ক রিপোর্ট : পান-পানি-নারী খ্যাত ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর জৈন্তাপুর উপজেলা। বিশেষ করে এ উপজেলায় রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস, তৈল, পাথর, বালু, কয়লা, ইউরেনিয়াম, তেজপাতা, কমলালেবু এবং চা-বাগান, লাল শাপলা বিল এবং পুরাকৃতি ভরপুর। নানা কারনে এই উপজেলাটি বাংলাদেশের নিকট পর্যটন উপজেলা হিসাবে পরিচিত।
মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ হওয়াতে প্রাকৃতিক ঝর্ণা দেখা মিলে উপজেলা হতে। যার কারনে প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটে আসে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায়। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী উপজেলার ভূখন্ডে বাংলাদেশের অভ্যান্তরে পাহাড়ী ঝর্ণা দেখা মিলেনি। সম্প্রতি পাহাড়ী ঝর্ণার অনুসন্ধান করতে গিয়ে উপজেলার জৈন্তাপুর ইউনিয়নে পর পর তিনটি ঝর্ণার সন্ধান পাওয়া যায়।
এগুলো হল- শ্রীপুর চা-বাগান ঝর্ণা, শ্রীপুর মরা ঝর্ণা এবং খড়মপুর আদুরি ঝর্ণা। সবুজ শ্যামল গাছ-গাছালি এবং ছোট বড় পাহাড় টিলা বেষ্টিত এলাকার উপজেলার শ্রীপুরের খড়মপুর গ্রামে অবস্থিত 'আদুরি ঝর্ণা'।
ছবি : শ্রীপুর মরা ঝর্ণা। |
সম্প্রতি তিনটি ঝর্ণার মধ্যে শ্রীপুর চা-বাগান ঝর্ণা এবং খড়মপুর আদুরি ঝর্ণা গুলোর ছবি স্থানীয় প্রকৃতি প্রেমীরা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করায় জৈন্তাপুর উপজেলায় অভ্যন্তের লুকিয়ে থাকা ঝর্ণা গুলোর সন্ধান পাওয়া যায়। তবে মরা ঝর্ণাটির কোন সন্ধান মিলেনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।ছোট বড় পাহাড় টিলা বেষ্টিত শ্রীপুর চা-বাগানের ভিতরে অবস্থিত রয়েছে আরও দুটি ঝর্ণা। এগুলো হল- শ্রীপুর চা-বাগান ঝর্ণা, শ্রীপুর মরা ঝর্ণা। চা-বাগানে অবস্থিত ১টি ঝর্ণাতে পানি প্রবাহ থাকলে, মরা ঝর্ণাটিতে পানি প্রবাহ নেই। স্থানীয় বাসিন্ধারা জানান, দুটি ঝর্ণায় পুরোধমে বৃষ্টিপাত না হলে তেমন পানি প্রবাহ হয় না। বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে ঝর্ণা গুলো তার রূপ লাবণ্য ফিরে পায়।
ঝর্ণা গুলো লোকালয়ের আড়ালে থাকার কারনে এগুলো সম্পর্কে স্থানীয় গ্রামবাসী ও বাগান শ্রমিক ব্যাতীত অন্য কেউ জানে না।
এছাড়া ঝর্ণা গুলোর অবস্থানে যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল না থাকায় দীর্ঘ দিন হতে লোক চক্ষুর অন্তরালে থাকে। মাঝে মধ্যে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা বেড়ানোর ছলে ঝর্ণা গুলোতে ছবি তোলে, গোসল করে আনন্দ ফুর্তি করে। গ্রামের লোকজন কৃষকরা ঝর্ণার পানি ব্যবহার করে কৃষি কাজ করে থাকে। তারা আরও বলে এক কিলোমিটার এরিয়ার মধ্যে তিনটি ঝর্ণা রয়েছে। তার মধ্যে কমবেশি সারা বৎসর খড়মপুর আদুরি ঝর্ণায় পানি প্রবাহ থাকে। বর্ষায় এর প্রবাহ কয়েকগুন বৃদ্ধি পায়।
ছবি : খড়মপুর আদুরি ঝরনা। |
স্থানীয় আধিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন আদুরি ঝর্ণার পানি নিত্যা প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করে আসছে। আরও জানান, ঝর্ণাগুলো যদি প্রশাসনিক ভাবে সংরক্ষণ করা হয় তাহলে এলাকাবাসীর প্রয়োজনের পাশাপাশি সিলেটের পর্যটন খ্যাতকে আরও আর্কষণ বৃদ্ধি পাবে এবং পাশাপাশি ঘুরতে আসা পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে।
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্ররা জানান, আমাদের উপজেলায় ঝর্ণা রয়েছে তা জানা ছিল না। পরে বন্ধুদের সাথে আড্ডার ফাঁকে ঝর্ণা নিয়ে কথা বলায় জানতে পারি চা-বাগানে এবং খড়মপুরে দুটি ঝর্ণার কথা। আমরা এগুলো দেখতে যাই, ছবি তুলি, পানিতে নেমে গোসল করি। আমাদের কাছে ঝর্ণা গুলো ভাল লাগেছে। দূর দূরান্তে গিয়ে আমরা ঝর্ণা দেখতাম।
বাড়ীর পাশে ঝর্ণা রয়েছে তা কখনো জানা ছিল না। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝর্ণার ছবি পোষ্ট করার পর প্রতিদিন বন্ধু বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশি ঝর্ণার জানতে চায়। ঠিকানা দিচ্ছি তারা ঘুরে এসে ঝর্ণা গুলো অসাধারণ বলে জানায়। এককথায় ঝর্ণা গুলো জৈন্তাপুর উপজেলাকে ভিন্ন মাত্রা এনে দেবে এবং পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে দাবী জানান, ঝর্ণা গুলো সংরক্ষণ করে পর্যটকদের দেখার উপযোগী করার। ঝর্ণা গুলো আমাদের বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য ঝুকি মুক্ত। অন্যন্যা ঝর্ণা সীমান্ত সংক্রান্ত জটিলতা ও প্রশাসনিক নানা রকম বাঁধা থাকে। জৈন্তাপুরের ঝর্ণা গুলো সম্পূর্ণ নিরাপদ ও ঝুকি মুক্ত, দু’দেশের সীমান্ত বাহিনীর জটিলতা নেই।
পর্যটন প্রেমী, বাংলাদেশ ফটোগ্রাফী সোসাইটির আজীবন সদস্য, ইমরান আহমদ সরকারি মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোঃ খায়রুল ইসলাম জানান, ঝর্ণা গুলোর সন্ধান পেয়ে ছবি তুলতে চলে যাই। আমার কাছে ঝর্ণা গুলো অসাধারণ মনে হয়েছে। ঝর্ণা গুলো আমাদের উপজেলার পর্যটন খ্যাতকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত আজমেরী হক জানান, জৈন্তাপুর ইউনিয়নে ঝর্ণা রয়েছে জানা নেই। আপনার নিকট প্রথম জানতে পারলাম, আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। পর্যটন উপযোগী হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের মাধ্যমে ঝর্ণা গুলোকে পর্যটনের আওতায় নিয়ে আসতে সকল প্রকার চেষ্টা করব।
তথ্য সূত্রে : আজকের পত্রিকা