বিজ্ঞাপন
জি ভয়েস ডেস্ক: নাটোরের লালপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের হাশেম আলী (৬২) দীর্ঘ ৩৯ বছরে ৫ হাজারেরও বেশি লাশ আনা-নেওয়া করেছেন। মূলত তার পেশাই লাশ বহন করা। তবে লাশ টানার কারণে কোনো যাত্রী তার গাড়িতে ওঠেন না। প্রায় ছয় বছর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একঘরে হয়ে ছিলেন। এ পেশায় জড়িত থাকায় তার মেয়ের বিয়েও হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, নাটোরের লালপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের আবু বক্কর ও মোছা শকেজানের ছেলে মো. হাশেম আলী। দীর্ঘ ৩৯ বছর ধরে তিনি লালপুর থানার লাশ নাটোর মর্গে আনা-নেওয়া করছেন। থানার লাশ বহন তার পেশা। তিনি গ্রামবাসীর কাছে ‘লাশ টানা হাশেম’ নামেই পরিচিত। কিন্তু এ পেশায় জড়িত থাকায় তার মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে চান না বলে জানিয়েছেন তিনি।
সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কচুয়া গ্রামে হাশেম আলী বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। আর এ দৃশ্য দেখে 'লাশ টানা হাশেম' আসছে বলে প্রতিবেশী শিহাবুর রহমান (১৬) দৌড়ে পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে হাশেম আলী বলেন, লালপুর থানার মরদেহ নাটোর মর্গে আনা-নেওয়া করছি। ২০ বছর আগে ইঞ্জিনচালিত ভ্যান কিনে এ কাজ শুরু করি। মৃতদেহ টানা ছাড়াও মামলায় জড়িতদের কবর থেকে লাশ উত্তোলন ও দাফন করে থাকি। শুধু তাই নয়, ময়নাতদন্তের জন্য ডাক্তার-ডোমের সঙ্গে লাশ কাটা ও বিবরণ লিখতেও কাজ করি।'
হাশেম আলী আরও বলেন, আমার তিন মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। লাশ টানার কারণে কোনো যাত্রী আমার গাড়িতে ওঠেন না। প্রায় ছয় বছর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একঘরে হয়ে ছিলেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরাও আমার সঙ্গে থাকেনি। আমার হাতের খাবার পর্যন্ত খায়নি।
শুধু এই পেশার কারণে আমার মেয়েদের কেউ বিয়ে করতে চায় না। তাই মেয়েদের নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে আছি। লাশ টানার জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ পাই না। মৃতের স্বজনদের কাছ থেকে সামান্য টাকা পাই। অন্য সময় মাঠে কাজ করে থাকি।
হাশেম আলীর স্ত্রী বুলু খাতুন বলেন, প্রথম দিকে লাশ টেনে বাড়ি আসার পর অস্বস্তি লাগত। বাড়ির কেউ তাঁর সঙ্গে মিশত না। এখন সয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে লালপুর থানার ওসি মো. ফজলুর রহমান বলেন, এ কাজের জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। মৃতদেহ বহনের জন্য কোনো টাকা তাকে দেওয়া হয় না। মৃত ব্যক্তির স্বজনদের কাছ থেকে ভাড়ার ব্যবস্থা করা হয়। বেওয়ারিশ লাশের ক্ষেত্রে থানা থেকে টাকা দেওয়া হয়ে থাকে।