বিজ্ঞাপন
নিজস্ব প্রতিনিধি : বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি নিবৃত পল্লীর পুকুর থেকে স্বর্ণমুর্তি উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। প্রতিদিন হাজারো নারী-পুরুষ মুর্তিটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। তবে সনাতন ধর্মীয় লোকজন মুর্তিটি দেখার সুযোগ পেলেও অন্য ধর্মাবলম্বীদের তা দেখতে দেয়া হচ্ছেনা। পুলিশ বিষয়টি নজরদারীর মধ্যে রেখেছে বলে জানান বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিল্লোল রায়।
বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী জানান, তার ইউনিয়নের নইরচক এলাকার অরুণ দাসের বাড়ির পুকুর থেকে দুর্গার স্বর্ণমুর্তি উদ্ধার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উদ্ধার হওয়া মুর্তির সাথে ২টি হাতবালা, ১টি ছোট কলসিও পাওয়া যায়। তিনি জানান, রাতে স্বপ্নের মাধ্যমে অরুণ দাসের ছেলে অনিক দাস পুকুরে মুর্তিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রয়েছে বলে দেখতে পান। পরদিন পুকুর থেকে ওইসব উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সনাতন ধর্মের লোকজন এক নজর দেখতে ও ভক্তি দিতে ওই বাড়িতে ভীড় করছেন। সেখানে একটি মন্ডপও তৈরী করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। তবে খুব সহজে পুকুরের জলে পাওয়া দুর্গার স্বর্ণ মুর্তি দেখতে দিচ্ছেনা উদ্ধারকারিরা। আবার অনেকেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে দর্শন না পেয়ে আটকানো দরজার সামনে ভক্তি দিয়ে প্রসাদ গ্রহণ করে ফিরে আসছেন। ওই বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। প্রবেশদ্বারে লেখা হয়েছে -ছবি তোলা নিষেধ।
জানা যায়, অনিক দাস দীর্ঘদিন থেকে কারো সাথে কোন কথা বলেন না। তার চলাফেরাও অন্য সবার চেয়ে আলাদা। দুর্গার স্বর্ণমুর্তি পাওয়ার পর থেকে তিনি আরো বেশি নিরব হয়ে গেছেন।
মা দুর্গার দর্শন পাননি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করে শিক্ষক তন্ময় পাল চৌধুরী বলেন, ‘অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর দর্শন পাইনি। তাড়া ছিল বলে যে ঘরে মা দুর্গাকে রাখা হয়েছে সেই দরজার সামনে ভক্তি দিয়ে এবং প্রসাদ গ্রহণ করে চলে আসি। ২-১দিনের মধ্যে আবার যাব। এবার দর্শন পেয়ে তবেই ফিরবো। তিনি জানান, তার মতো আরো অনেকেই দর্শন না নিয়ে ফিরে এসেছেন। আবার অনেকেই সকালের দিকে একবার দেখে পুনরায় দেখার অভিপ্রায় নিয়ে অপেক্ষা করছেন। দরজার একটু ফাঁক দিয়ে দুর্গা মুর্তি দেখতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত অসিথ কর বলেন, অনেকের সৌভাগ্য হয়নি, কিন্তু আমি মায়ের (দুর্গা) কাছে কৃতজ্ঞ তিনি দর্শন দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে অনিক দাসের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলেননি। তার বাবা অরুণ দাসের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনিও কথা বলতে রাজি হননি। শেওলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য নজমুল ইসলাম বলেন, মুর্তি উদ্ধারের পরদিন তিনি তা দেখে এসেছেন।
দর্শনার্থিদের ভীড় সামাল দিতে ব্যস্ত অনিক দাসের কাকা বলেন, ‘অনিক কয়েকদিন আগে মা দুর্গার মুর্তিটি পেয়ে আমাদেরকে জানায়। এরপর থেকে আমরা মায়ের সেবাব্রত নিয়ে ব্যস্ত আছি।’ তবে কোন জায়গা থেকে মুর্তিটি পাওয়া গেছে কিংবা এটি স্বর্ণের মুর্তি কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মা কি ধাতৃর রূপ নিয়ে এসেছেন এটা আমাদের কাছে বড় বিষয় নয়, তিনি আমাদেরকে বেছে নিয়েছেন- এটা আমাদের পরম পাওয়া।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় বলেন, লোকমুখে শোনেছি মুর্তি পাওয়ার বিষয়টি। এখনো পরিদর্শনে যাওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্গা মুর্তিটি ওই বাড়ির মন্ডপে রাখা আছে। বিষয়টি নিয়ে তাদের নজরদারি রয়েছে বলে জানান তিনি।