বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় তিন দফায় দীর্ঘমেয়াদী বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যা পানি বিকট আকার ধারণ না করলেও উপজেলার কৃষকের আমন ফসলের ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতির পরিমাণটা বেশি।বীজতলাসহ আমন ধান রোপনের মোক্ষম সময়ে বন্যা আঘাত হানে ফসলের মাঠে। বন্যার পানির স্থায়িত্ব বেশি হওয়ায় দীর্ঘ সময়ের বন্যার পানির নাকানি-চুবানিতে সদ্য রূপায়িত আমন ধানের গাছে পচন ধরেছে। বীজতলায় থাকা ধানের চারা মাটির সাথে শুয়ে আছে। আমন মৌসুমের শুরুতে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছেন উপজেলার কৃষকরা। এই ধাক্কা অনেক কৃষকের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।
বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে, যত পানি কমছে ততো কৃষকের হতাশা বাড়ছে সাথে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। উপজেলার বেশিরভাগ কৃষকের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস। হাজার প্রতিকূলতা আর ঋণে জর্জরিত কৃষকেরা এবছর আমন মৌসুমের শুরুতেই বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছেন যা অনেকের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তারা। উপজেলার বেশিরভাগ কৃষক বেসরকারি এনজিও সংস্থাদের কাছে ৫ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রস্ত আছেন। কেউ কেউ স্থানীয় কৃষি ব্যাংকের দেনার দায়েও হতাশায় ভুগছেন।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমের বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে আউশ-আমনের আবাদ।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মাঠে থাকা আমন ধানের অনেক জমি বন্যায় ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হয়ে গেছে বীজতলায় থাকা চারা। পড়তে পারেন চারা সংকটে মনে করছেন উপজেলার কৃষকরা। অনেক কৃষক জানিয়েছেন ইতিমধ্যে বীজতলায় যাদের চারা ভাল রয়েছে তারা দাম দ্বিগুণ করে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে উপজেলার অনেক কৃষক আবার দ্বিতীয় দফা ক্ষেতের মাঠে নেমে পড়েছে আবার অনেকে করছে জল্পনা-কল্পনা। অনেক কৃষক আবার ধানের চারা খুজায় ব্যস্ত। দ্বিতীয় দফা প্রস্তুতিতে আর্থিক সংকট, চারা সংকট, লোকবল সঙ্কট সবমিলিয়ে বর্তমান সময়ে কৃষকদের কাছে ক্ষেতের মাঠে নামতে হিসাব-নিকাশ টা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। চলমান বন্যার কারণে উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা চরম অনিশ্চয়তায় আছেন।
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের স্থিতিশীলতা ও চলমান অগ্রগতিতে কৃষি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষি ব্যবস্থার ওপর নতুন নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরূপ প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে এ অবস্থায়, কৃষক যদি কৃষি কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ফসল হারিয়ে লোকশান গুনে এবং রাষ্ট্র থেকে কাক্সিক্ষত সহযোগিতা না পায় তাহলে কৃষি কাজে একসময় তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এরূপভাবে কৃষকের কৃষি কাজের প্রতি অনাগ্রহ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে যা আমাদের দেশর বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, গ্রামীণ জনপদের জীবিকা ও জাতীয় অর্থনীতির জন্য এক অশনিসংকেত। তাই আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি ও কৃষককে সুরক্ষা প্রদান সময়ের দাবি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় এই বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছিল কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে ১৬ হাজার হেক্টর আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। চলমান বন্যায় তা অনেকটা বাধাগ্রস্থ। নয় হাজার হেক্টর আমন ফসলি জমি আবাদ হয়েছিল। আট হাজার হেক্টর রূপায়িত আমন ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এ পর্যন্ত ৬ হাজার হেক্টর পানির নিচ থেকে উদ্ধার হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আলী জানান, চলমান বন্যায় আমন ও রবিশস্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তিনি জানান ১০০ ভাগ খারাপও না আবার ভালও না। রোপনের সময় এখনও আছে অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। উপজেলার তোয়াকুল ডৌবাড়ি রুস্তমপুর ইউনিয়ন প্রচুর পরিমাণে চারা আছে, কৃষক চারা সঙ্কটে পড়ার কথা নয়।
বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা বিধানে দৃষ্টান্তস্বরূপ সফলতা লাভ করেছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এ সফলতার মূল ভিত্তি রচনা করেছেন এদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক। কৃষিবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট সবিনয় প্রস্তাব আমাদের গ্রামীণ কৃষক জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে কৃষি ও শস্যবীমা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ঠ বাজেটসহ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের দিনবদলের অংশীদার হবেন। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভুক্তভোগী উপজেলার কৃষকেরা উপজেলা প্রশাসন কর্মকর্তা মহোদয়গণের সুদৃষ্টি কামনা করেন।