বিজ্ঞাপন
ফাহিম আহমদ: সারাবিশ্বে করোনা মহামারী চলছে। বাংলাদেশেও করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। করোনা সংকটে অনেকেই চাকুরি হারিয়ে হয়ে গেছেন বেকার। অনেকে আবার ব্যবস্থা বানিজ্যেও লোকসান গুনছেন। এমন পরিস্থিতিতেও স্বাবলম্বী হওয়ার প্রচেষ্টায় গোলাপগঞ্জের দুই উদ্যোক্তা। উপজেলার পৌর এলাকার দাড়িপাতন গ্রামের দুই উদ্যোক্তা ইমরুল হানিফ ও বিলাল আহমদ। তারা বেকার না থেকে চাষ করছেন বিভিন্ন প্রজাতির উন্নতমানের পোনা মাছ। গড়ে তুলেছেন দাড়িপাতন হ্যাচারী ও ফিসারীজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে এই দুই উদ্যোক্তা মাছের পোনা চাষ করে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। প্রতিদিনই উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে তাদের এই উন্নতমানের মাছের পোনা মাছ কিনতে আসছেন ক্রেতারা।
জানা যায়, এই দুই উদ্যোক্তা ২০১৮ সালে ২ একর জায়গা নিয়ে পুকুর খনন করে প্রথমে মাছের পোনা ছেড়ে বড় করতেন। কিন্তু ভালো পোনা পেতে তাদের অনেক বেগ পেতে হত। ভালো পোনার জন্য তাদের অনেক দূর যেতে হতো। তাদের মত অনেকেই ভালো পোনা মাছের অভাবে মাছ চাষে এগুতে পারেনি। এই উদ্যোক্তা দুই বৎসর মাছ চাষ করে লাভের মুখ দেখলেও পরবর্তী চিন্তা করেন যদি তারা নিজেরাই উন্নতমানের পোনা চাষ করেন তাহলে উপজেলার অনেক বেকার তরুণ যুবক উদ্যোক্তা মাছ চাষে আগ্রহী হবে। তাদেরও অনেক মোনাফা হবে। যেই ভাবে সেই কাজ।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তারা রেনু থেকে পোনা উৎপাদন শুরু করেন। ধীরে ধীরে উপজেলার সবাই জানতে শুরু করে যে দাড়িপাতন হ্যাচারী ও ফিসারীজে উন্নত মানের মাছের পোনা পাওয়া যায়। এখন সপ্তাহের প্রতি শনিবার ও বুধবার উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে ভীড় করে মাছের পোনা কিনতে।
সরেজমিন উপজেলার পৌর এলাকার দাড়িপাতন হ্যাচারি এন্ড ফিসারিজে গিয়ে দেখা যায়, দুই একর জায়গার বড় বড় চারটি পুকুর রয়েছে। এ-ই পুকুরগুলো থেকে তারা বিভিন্ন প্রজাতির পোনা তুলে বিক্রি করছেন। উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে এসব মাছের পোনা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
মাছের পোনা কিনতে আসা মাজেদ আহমদ নামের এক ব্যাক্তি জানান, 'বাড়িতে বড় একটি পুকুর রয়েছে। কিন্তু ভালো মানের মাছের পোনা আশপাশে না পাওয়ায় এত এভাবে খালি পড়েছিল। যখন জানলাম নিজ উপজেলায় দাড়িপাতনে উন্নত মানের বিভিন্ন প্রজাতির পোনা পাওয়া যাচ্ছে তাই কিনতে আসলাম।'
খোকন আহমদ নামের আরেক যুবক জানান, 'আমিও আমার পুকুরের জন্য মাছের পোনা কিনতে এসেছি। তাদের পোনার মান খুবই ভালো মনে হলো, দামও অনেক কম।'
তিনি আরো বলেন, 'করোনার কারণে অনেক যুবক বেকার হয়ে গেছে। তারা যদি মাছ চাষে নিজেদের নিয়োজিত করে তাহলে বেকার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।'
এসময় কথা হয় উদ্যোক্তা বিলাল আহমদের সাথে। তিনি বলেন, 'মানুষ শিক্ষিত হয়ে চাকরির পিছনে ঘুরতে থাকে। চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। যারা চাকরির পিছনে ঘুরতেছেন, চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।'
তিনি আরো বলেন, 'আমি যুব উন্নয়ন থেকে এ বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণও নিয়েছি। আমরা ধীরে ধীরে আমাদের ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করতে চাই। যারা বেকার তাদের কর্মসংস্হানের সুযোগ করে দিতে চাই। বর্তমানে আমাদের ফিসারিতে ৪ জন কর্মচারি কাজ করতেছেন। যদি কেউ উদ্যোক্তা হয়ে মাছ চাষ করতে চায় আমার কাছে আসলে আমি তাকে পরামর্শ দিবো।'
তিনি বলেন, 'এখন পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক টাকার পোনা বিক্রি করেছি৷ প্রতিদিন পোনা বিক্রির জন্য কল আসে। সব খরচ শেষে পোনা বিক্রি করে ২ লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে তিনি জানান।'
আরেক উদ্যোক্তা ইমরুল হানিফ বলেন, 'আমার নিজের চোখের সামনে দেখেছি অনেকে উদ্যোক্ত হয়ে সাফল্য খুঁজে পেয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সব সময় বলে থাকেন , চাকরির পিছনে না পড়ে উদ্যোক্তা হতে। আমরা নিজেদের সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের আরও অনেক কিছু করার চিন্তা আছে।'
এদিকে দাড়িপাতন হ্যাচারী ও ফিসারীজ থেকে কেউ যদি স্বল্প মূল্যে উন্নতমানের পোনা ক্রয় করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন নিম্ন নাম্বারে বিলাল আহমদ-০১৭৮৩-০০৬৩৬২, ইমরুল হানিফ ০১৬৩১-২৬১৯৯৬)।