Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-08-24T12:11:35Z
বিয়ানীবাজারলিড নিউজ

বিয়ানীবাজার মানবতার দেয়াল একাকার নেই মানব প্রেমিদের দান

বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত প্রায় দেড় বছরের বেশী সময় ধরে চলছে করোনা। মহামারি দেখিয়ে দিচ্ছে চরম বাস্তবতা আর অমানবিকতার চূড়ান্ত রূপ। অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটছে মানুষ। অসহায় দিন কাটাচ্ছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী, দিনমজুরেরা। রাস্তা, ফুটওভার ব্রিজে বেড়েছে ভ্রাম্যমাণ বাস্তুহীন মানুষের সংখ্যা। এমন এক অনিশ্চিত বাস্তবতায় বিয়ানীবাজারে মানবিকতার খোঁজ করতে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলায় মানবিকতা আছে কেবল কথায়, মুখে। 

খোদ মানবিকতা নেই বিয়ানীবাজারের ‘মানবতার দেয়ালগুলোতেও’।

বিয়ানীবাজার পৌরশহরের একমাত্র মানবতার দেয়ালে মানবিকতার চিহ্নমাত্র নেই। সামনে ফুটপাতে বসে তরকারি বিক্রি করছেন হকাররা। অথচ বেশ ঘটা করে এই মানবিক দেয়ালের উদ্বোধন করা হয়। সপ্তাহখানেক পরে স্থানীয় সামজিকতার মতো দেয়াল থেকেও চলে যায় মানবতা।

দেয়ালে ‘আপনার অপ্রয়োজনীয় কাপড় এখানে রেখে যান, প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে যান’ লিখে সেখানে অসহায়, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কাপড় ঝুলিয়ে রাখা হতো। কিন্তু দেখা যায়, মানবতার দেয়ালখানা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

পৌরশহরের প্রমথনাথ দাস রোডের মুখে সিলেট-বিয়ানীবাজার প্রধান সড়কের পাশঘেঁষে সরকারিভাবে তৈরী পুরাতন হাসপাতালের দেয়ালে কিছু তরুণের উদ্যোগে স্থাপন করা হয় মানবতার দেয়াল। দিন গড়ানোর সাথে সাথে বিবর্ণ হয়ে পড়ে এটি। কাছের ব্যবসায়ী জুনেদ ইকবাল লাজুক জানান, শুরুতে কিছুদিন এখানে প্রতিনিয়ত কাপড় থাকলেও একটা সময় পর এখানে আর কেউ কাপড় রাখত না। তিনি বলেন, ‘দেওয়ার চেয়ে নেওয়ার লোক অনেক বেশি। শুরুতে বেশ কাপড় রাখা থাকত। আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে। অনেক দিন এমনিতেই পড়ে আছে দেয়ালটি।’

মানবতার দেয়ালটি বৃষ্টি এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সবজি ব্যবসায়ী লিয়াকত বলেন, ‘এইখানে দেওয়ালে মানুষজন কাপড়-চোপড় রাখত। যাদের কাপড় কিনার একেবারেই সামর্থ্য নাই তারা এই দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকত।’

প্রমথ নাথ দাস মোড়ে দেখা যায়, একটি হাতাগাড়িতে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই করার কারণে এটি টেনে নিয়ে যেতে পারছেননা চালক। ওই হাতাগাড়ির চালক পথচারীদের ধাক্কা দেওয়ার অনুরোধ জানালেও কেউ কানে তুলছেন না। উপায়ান্তর না পেয়ে রাস্তায় বসে রইলেন তিনি। চালক জানালেন, ‌অনেক করে বললাম একটু ধাক্কা দিয়ে হাতাগাড়িটা সরিয়ে দেয়ার জন্য কিন্তু কেউ কানেই নিল না। মাইনসের মধ্যে আর কোনো মানবিকতাই নাই।

রিকশাচালক আব্দুল কুদ্দুস জানালেন, বিয়ানীবাজার পৌরশহরে কোথাও মানবিকতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানবিকতা পাইবেন কোথায়? মানবিকতা আছে হামাগের গেরামের মসজিদের পুকুর ঘাটে। সেখানে সবাই কাপড় কাচে, গোসল করে। বিকালে ওইখানে আড্ডাও চলে। প্রতি শুক্রবারে খাওন দেয়। কারো কোন মানা নাই। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুঁড়ে রিক্সা টানলেও কেউ ১০ টাকা বেশী দিতে চায়না। অথচ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হোটেলে খেয়ে-বসে ১শ’ টাকা বখশিশ দেয়।

করোনার চলতি ঢেউয়ে সামাজিকভাবে খুব কম সংখ্যক ব্যক্তি মানবিকতা দেখিয়েছেন। প্রতিবেশী গরীব লোক খেয়ে-না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলেও এসবে চোখ নেই ধনী পরিবারের।

চলমান এই বিধ্বস্থ মানবিকতার যুগে গতকাল শুক্রবার পালিত হলো বিশ্ব মানবতা দিবস। দিনটি উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় বিয়ানীবাজারেও ছিলনা কোন কর্মসূচি। অথচ শান্তি আর মানবিকতার শ্লোগান নিয়ে এই শহরে কত দোকান (!) খোলা হয়েছে।

উল্লেখ ব্রাজিলের অধিবাসী সেরগিও ভিয়েরা দ মেলো জাতিসংঘের কূটনীতিক হিসেবে কাজ করার সময় ৩৪ বৎসরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন মানবিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০০৩ সালে তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইরাকে যান এবং বাগদাদে কাজ শুরু করেন। সেখানে ১৯ আগস্ট এক বোমা হামলায় ২১ জন সহকর্মী সহ তিনি মারা যান। প্রায় তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যাঁরা যুদ্ধে সব হারিয়েছেন, সেই সব সর্বহারা মানুষের পাশে নিঃস্বার্থভাবে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

সেরগিও ভিয়েরা দ মেলো ও তাঁর সহকর্মীদের প্রয়াণ দিবসটিকে জাতিসংঘ ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ‘বিশ্ব মানবতা দিবস’ হিসেবে অধিভুক্ত করে এবং ২০০৯ সালের ১৯ শে আগস্ট প্রথমবারের মতো বিশ্ব মানবতা দিবস পালিত হয়।
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ