বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : এক পরিবারে মাত্র পাঁচ সদস্য। আর এতেই এক গ্রাম। যার নাম শ্রীমুখ। আর এ গ্রামের বাসিন্দা কেবল আফতাব আলীর পাঁচ সদস্যের পরিবারই।
গ্রামটির অবস্থান সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার তেলিকুনা ও পশ্চিম নোয়াগাঁও নামে দুই গ্রামের মাঝখানে। মাত্র ৬০ শতক জায়গায় অবস্থিত এ গ্রামটি। ৫ জনের গ্রামটিতে ১ জন পুরুষ, ৩ জন নারী এবং এক শিশুর বসবাস।
ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী ভোটার সংখ্যা মাত্র ৩ তিনজন। অনেকের দাবি এটি এশিয়া সবচেয়ে ছোট গ্রাম বটেই, খুঁজলে বিশ্বের কোথাও এত ছোট গ্রাম আর মিলবে না।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিকাল স্ট্যাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, ‘দাগ, খতিয়ান এবং মৌজা সকল কিছুতেই এটি শ্রীমুখ গ্রাম হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং এ গ্রামের সদস্য সংখ্যা মাত্র ৫ জন। তাই ধরেই নেওয়া যায় এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গ্রাম। কারণ ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গ্রাম যেটি সেটি হচ্ছে ক্রোয়েশিয়ার ‘হাম’ নামের একটি গ্রাম। সেটিতে জনসংখ্যা ৩০ জন। এবং আঁকারে শ্রীমুখ গ্রামের থেকে অনেক বড়। সে হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃতির জন্য এ গ্রাম নিয়ে সরকারের কাজ করা উচিৎ।’
বর্ষায় চারপাশে পানিতে টইটুম্বুর আর শুষ্ক মৌসুমে ধানি জমি কিংবা জমির মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো যেন এ গ্রামের ঐতিহ্যের সাক্ষী। গ্রামটি অবহেলিত হলেও পর্যটকদের নজর কাড়ার মতো।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, দেশ ভাগের আগে একসময় শ্রীমুখ গ্রামটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস ছিলো। কালের বিবর্তনে গ্রামটি ছোট হতে থাকে, টিকে থাকে একটুকরো ভূমি। আর একটি মাত্র পরিবার।
স্থানীয় পার্শ্ববর্তী এলাকাবাসীদের মতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পর, ১৯৬৪ সালে শ্রীমুখ গ্রামে একটি হিন্দু পরিবার বসবাস করতো। বসবাস করা হিন্দু পরিবারটি অন্যত্র চলে যাওয়ার সময় বর্তমান বাসিন্দা আফতাব আলীর আপন মামা প্রতিবেশী পশ্চিম নোয়াগাঁও গ্রামের মরহুম হাবিব উল্লার কাছে শ্রীমুখ গ্রামের বাড়িটি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যান তারা।
তিনি মারা যাওয়ার আগেই বর্তমান বাসিন্দা আফতাবের মা মরহুমা কটাই বিবিকে দান করে দেন বাড়িটি। তখন থেকে ঐ বাড়িতে বসবাস করছেন আফতাব পরিবারের লোকজন।
গ্রামটিতে আসা যাওয়ার জন্য নিজস্ব বা নির্দিষ্ট কোন রাস্তা নাই। তাই প্রতিবেশী গ্রামের অন্যের ক্ষেতের জমির আলের উপরে দিয়েই আসা যাওয়া করতে হয়। এমনকি সুপেও পানিরও সংকট রয়েছে এ গ্রামে। বর্ষায় চলতে হয় নৌকায়।
পরিবারের একমাত্র কর্তা আফতাব আলী বর্তমানে প্রবাসে আছেন। সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রীর সাথে। স্ত্রী রাহিমা বেগম জানালেন দুর্ভোগের কথা। বলেন, সরকার অনেক উন্নয়ন করছে, কিন্তু আমাদের গ্রামটিতে সরকারের কোন দৃষ্টি নাই। গ্রামটির নিজস্ব কোন রাস্তা নাই।
অন্যের ধানী ক্ষেতের জায়গা দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। বাচ্চাদের স্কুলে যেতেও নানান সমস্যায় পড়তে হয়। একমাত্র টিউবওয়েলটিও বর্তমানে নষ্ট প্রায়। সরকারি ভাবে কোন ডিপ টিউবওয়েল না পাওয়ার কারণে পুকুরের পানি পান করতে হয়। বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ পেলেও, তাতেও নানান সমস্যার কথা বলেন তিনি।
শ্রীমুখ গ্রামে যেতে হলে, সিলেট থেকে বিশ্বনাথ, উপজেলা সদর থেকে মাত্র ২০ মিনিটের রাস্তা। মধ্যখানে ‘রামপাশা’ বাংলার রাখাল রাজা হাসন রাজার বাড়ি।
তবে আশার বাণী শুনালেন বিশ্বনাথ উপজেলার চেয়ারম্যান নুনু মিয়া। তিনি সোমবার (১৯ জুলাই) বিকালে বলেন, ‘এইমাত্র আমি পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে এ গ্রাম নিয়ে কথা বলে এসেছি। শ্রীমুখ গ্রামটিকে কীভাবে বিশ্বের বুকে একটি স্বীকৃতি নেওয়া যায় এটি নিয়ে পরিকল্পনা চলছে। আপাতত বিশ্ব স্বীকৃতি, রাস্তা, গ্রামের সৌন্দর্য, পানি এবং স্বাস্থ্য এ চারটি বিষয় নিয়ে আমি কাজ শুরু করেছি।’
তথ্য সূত্রে : সিলেট ভয়েস