বিজ্ঞাপন
জাহিদ উদ্দিন: ছোট বেলার ঈদের আনন্দ এখন আর নেই। ঈদ আসার আগ থেকেই শুরু হয়ে যেত ঈদের প্রস্তুতি। মাকে বুঝিয়ে ঈদের জামা কেনা, ঈদের জন্য টাকা জমিয়ে রাখা এসব ছোট খাটো অনূভুতিগুলো এখন কেবলই স্মৃতি।
ঈদের দিন রাতে কি যে আনন্দ হত, বলে বুঝানোর ভাষা নেই। ওইদিন কোনভাবেই ঘুমাতে পারতাম না, সারা রাত জেগেই কাটিয়ে দিতাম। ইমাম সাহেব যখন মসজিদে ফজরের আজান দিতেন তখন প্রতিযোগিতা করে গোসল করতে চলে যেতাম, কার আগে কে গোসল করবে। গোসল শেষ হলে শুরু হতো ঈদের সালামী ভাগিয়ে নেওয়ার প্রতিযোগিত৷ যখন সালাম দিয়ে বড়দের কাছে ঈদের সালামী পেতাম তখন কি যে আনন্দ লাগতো। নতুন জামা কাপড় পড়ে লাচ্ছি সেমাই খেয়ে জায়নামাজ হাতে নিয়ে যখন ঈদের নামাজ পড়তে যেতাম, তখন মনে আনন্দের বন্যা ভয়ে যেত। নামাজ শেষে কোলাকুলি, মোসাফা ঈদের আনন্দ আরো বাড়িয়ে দিতো। ছোট্ট বন্ধু আরেক ছোট্ট বন্ধুর কাধে কাধ মিলিয়ে যখন কোলাকুলি করতো এ-ই দৃশ্য অন্যরকম।
কোরবানির জন্য যে পশুটা কিনে আনা হত বাড়িতে যতদিন থাকতো ওর প্রতি অন্যরকম এক ভালবাসা তৈরী হয়ে যেত। নিজে বাড়িতে থাকার সুবাদে যখনি সময় পেতাম ওই পশুটির জন্য গাছের পাতা নিয়ে আসতাম। এনে নিজ হাতে খাইয়ে দিতাম আর অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতাম কিভাবে খায় দেখার জন্য। যখন ওই পশুটি কোরবানী দিয়ে দেওয়া হত অনেক কষ্ট লাগতো, অজান্তে চোখে জল এসে যেত। অল্পদিনে ওর প্রতি একটা ভালবাসা জন্ম হয়ে যেত।
ঈদের নামাজ ও কোরবানি শেষে সকলে মিলে হৈ-হুল্লোড় আর বাদ ভাঙ্গা আনন্দ এখন ঈদে খুঁজে পাইনা। ঈদ এলে ইচ্ছে করে সেই ছোট বেলায় ফিরে যেতে। সময়ের ব্যবধানে ছোটবেলা হাঁরিয়ে ফেলেছি, এখন কেবল স্মৃতি। এই ভালবাসার দিনগুলো আর ফিরে আসবেনা আমার জীবনে। দিন যতই যাচ্ছে বাড়ছে যান্ত্রিকতা, বাড়ছে ব্যস্ততা। এখনো ছোটবেলার ঈদের স্মৃতিগুলো মনে পড়লে ইচ্ছে করে চিৎকার করে কাঁদি।