বিজ্ঞাপন
ভ্যালি সিটি, সিলেটে বাংলাদেশের লন্ডনি পাড়া। |
একটি সুন্দর বাসস্থান, নিরাপদ সড়ক, বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশি পাড়া। শুধু মৌলিক চাহিদাই নয়, শত কষ্টের জীবিকা নির্বাহের পর স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবনের জন্য অতি যত্নে লালিত স্বপ্নের নামান্তর। এর সাথে যদি যুক্ত হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য তাহলে জীবনে আর কিছুই চাওয়ার থাকে না। ঠিক এরকমই এক জায়গার সন্ধান মিলবে পূণ্যভূমি সিলেটের পূর্ব শাহী ঈদগাহ, টিভি গেট এলাকায় প্রবেশ করলে। প্রবেশদ্বার সংলগ্ন দেয়াল জুড়ে গোটা গোটা অক্ষরে ভ্যালি সিটি লেখাটা প্রথমেই জায়গাটার নান্দনিকতা নিয়ে একটা ধারণা দিয়ে দিবে। চলুন, সিলেটে বাংলাদেশের লন্ডনি পাড়া খ্যাত এই জায়গাটার ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিই।
ভ্যালি সিটির লন্ডনি পাড়া নামকরণ : লন্ডনের কর্মরত বাংলাদেশিরা সম্পূর্ণ লন্ডনের বাড়িগুলোর আদলে বানিয়েছে এখানকার বাড়িগুলো। ডুপ্লেক্স বাড়ি আর বিদেশি ঘরানার রাস্তাঘাট দেখে নিমেষেই এর নামকরণের সার্থকতা টের পাওয়া যায়। এছাড়া সিলেটের লোকদের সাথে বিলেতের সম্পর্কটা সবারই জানা। ইংল্যান্ড ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ২৫ লাখ সিলেটি বাস করে। তার মধ্যে শুধু যুক্তরাজ্যেই আছেন ৯৮ ভাগ সিলেটি। তাই সিলেটিরা বাংলাদেশে লন্ডনি হিসেবে পরিচিত। তাদের তৈরি এই বাড়িগুলোও স্থানীয়দের সবাই লন্ডনি বাড়ি নামেই ডাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা এই সুন্দর ভ্যালি সিটিটা সবার কাছে এখন লন্ডনি পাড়া।
বাড়ির মালিকেরা নিজেদেরকে ভ্যালি সিটি ফ্যামিলি বলে থাকেন। পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিয়ে একটি সুন্দর সম্প্রদায় গড়ার নিমিত্তেই লন্ডনি পাড়ার গোড়াপত্তন।
ভ্যালি সিটির রাতের দৃশ্য। |
কীভাবে গড়ে উঠলো বাংলাদেশের লন্ডনি পাড়া : ড. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী সর্বপ্রথম ২০১০ সালে এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তাঁর সাথে ইংল্যান্ডের আরও কিছু ডিরেক্টর অংশীদার হন। প্রায় দশ বছর সময় লেগেছে পুরো আবাসন প্রকল্পটি শেষ হতে। বর্তমানে মালিকদের শতকরা ৫০ ভাগ প্রবাসী, আর বাকি ৫০ ভাগ দেশে চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। বর্তমানের সিলেটের এই ভ্যালি সিটির মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্বে আছেন শহিদ আহমদ চৌধুরী।
সিলেট ভ্যালি সিটি নির্মাণশৈলী : সমগ্র সিলেট ভ্যালি সিটির আয়তন প্রায় দুই হাজার শতক। সর্বমোট ৬৯টি বাড়ির সবগুলোই লন্ডনের ঘরবাড়ির মত ডুপ্লেক্স করে বানানো। সবধরণের আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন বাড়িগুলোর প্রতিটির মাঝে যথেষ্ট আলো-বাতাস চলাচলের জন্য আছে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা। ডুপ্লেক্সের উপরে অ্যাটাচ বাথরুমসহ চারটি বেডরুম আর নিচে ড্রইং, ডাইনিং, রান্নাঘর, স্টোর রুম ও সার্ভেন্ট রুম। প্রাইভেট কার রাখার জন্য আছে একটি করে গ্যারেজ।
লন্ডনি পাড়ার অধিবাসীদের জন্য আছে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মসজিদ, একটি জিমনেশিয়াম ও একটি মিনি পার্ক। কাঙিক্ষত বাড়িটি সহজে খুঁজে বের করার জন্য প্রতিটি রাস্তার মোড়ে আছে নাম্বার প্লেট ও সাংকেতিক চিহ্ন। ফুল-ফল ও সবজি বাগান আছে প্রতিটি বাড়ির সামনে। মালিকরা বিভিন্ন মৌসুমে সবজির চাষ করে থাকেন। পুরো ভ্যালি সিটি জুড়ে রাস্তার দু’ধারে সারিবদ্ধ গাছগাছালিতে ভরা। সকাল-সন্ধ্যা বাচ্চাদের কোলাহলে পরিপূর্ণ থাকে লন্ডনি পাড়া।
সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি বাড়ির সামনে আছে সিসি ক্যামেরা। এছাড়া প্রধান ফটকে ২৪ ঘণ্টা কর্মরত আছে নিরাপত্তা রক্ষী। বহিরাগতদেরকে যথেষ্ট কারণ দর্শিয়ে অনুমতিক্রমে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়।
ভ্যালি সিটির দিনের অংশ। |
লন্ডনি পাড়ার একদম সীমান্ত ঘেষে আছে বিশাল চা-বাগান। উপর থেকে দেখে মনে হয় সবুজের ভেতর আলাদা এক ভূখন্ড।
অবশেষে সন্তান, পরিবার এবং সর্বোপরি সমগ্র দেশের জন্য প্রবাসীদের অনন্য অবদানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সিলেট ভ্যালি সিটি। রেমিটেন্স যোদ্ধাদের কষ্টার্জিত অর্থে গড়ে ওঠা এই লন্ডনি পাড়া স্থাপন করেছে এক আদর্শ মহল্লা। যেরকমটা হওয়া উচিত দেশের প্রতিটি আবাসিক এলাকাগুলোতে। ডুপ্লেক্স বাড়ির বাসিন্দাদের কণ্ঠে অকপটে স্বীকৃতি পায় পরস্পরের প্রতি সুসম্পর্কের কথা। পরিবেশের পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি নিরাপত্তার ব্যাপারেও সবাই নিঃসন্দিহান। মাঝরাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ করে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাড়িয়ে থাকা বাড়িগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ নকশার পরিচয় দেয়। সর্বোপরি, লন্ডনি পাড়ার লোকেরা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, স্বপ্ন পূরণের লক্ষে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এরকম অভিজাত পল্লীও বানানো সম্ভব।
ডেস্ক রিপোর্ট / এস এইচ