বিজ্ঞাপন
মাহফুজ আহমদ চৌধুরী : গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী মুড়া কচু বিদেশে রপ্তানি কমে যাওয়ায় ও চাষ উপযোগী জমি কমে যাওয়ায় চাষাবাদে আগ্রহ কমছে চাষীদের।
একাধিক খাদ্যগুণ সম্পন্ন কচুর মুড়ার মূল, লতি, কান্ড ও পাতার সবজি হিসেবে কদর রয়েছে। গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ীর জলাভূমিতে এক সময় ব্যাপক হারে মুড়া কচু ও লতি উৎপাদন হতো। উর্বর জলাভূমিতে বর্তমান সময় জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, জমি ভরাট করে বাড়ি ঘর নির্মাণ করায় ও প্রবাসে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই চাষাবাদ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
স্থানীয় মুড়া কচু চাষীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এক সময় ফুলবাড়ী এলাকায় উৎপাদিত মুড়া কচু ও লতি গোলাপগঞ্জ, আশপাশের উপজেলা ও সিলেট নগরীর চাহিদা পূরণ করেও লন্ডন, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। বর্তমান চলমান করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের বাইরে রপ্তানি এখন প্রায় বন্ধ।
এক সময় উৎপাদনের মৌসুমে তথা বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাসে প্রতিদিন গড়ে ৪/৫ ট্রাক মুড়া কচু বিক্রি হলেও এ বছর তা কমে ২/৩ ট্রাকে নেমে এসেছে।
স্থানীয় চাষী আলতাফ হোসেনের সাথে আলাপ হলে জানা যায়, তিনি প্রায় ৩-৪ পুরুষ ধরে মুড়া কচু চাষ করে আসছেন। এ বছর ৬ বিঘা জমিতে চাষ করে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার লতি ও মুড়া কচু বিক্রি করেছেন। মৌসুম শেষে ৪ লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করতে সক্ষম হবেন। তিনি জানান, সরকারিভাবে বেশ কয়েকবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। গত বছর উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে ২ হাজার লতিরাজ কচুর চারা, সার ও নগদ দু’হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। তার দাবি, গোলাপগঞ্জে তিন ধরনের কচুর লতি উৎপাদন হয়। এর একটা হচ্ছে স্থানীয় জাত, লতি রাজ এবং বানিয়াচঙ্গী। উৎপাদনের ক্ষেত্রে বানিয়াচঙ্গী টাই ফলন বেশি হয়ে থাকে।
আরেক মুড়া কচু চাষী বাচ্চু মিয়া জানান, তিনি প্রায় দেড় বিঘা জায়গা চাষাবাদ করে ৩০ হাজার টাকা উপর বিক্রি করেছেন। মুড়া কচুর হালি ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। মুড়া কচু ব্যবসায়ী ফরমান আলী জানান, দৈনিক হাজার ১২শ’ টাকা বিক্রি করে থাকেন। তা থেকে যা লাভ হয় তা দিয়ে সংসার চলে।
গোলাপগঞ্জে উৎপাদিত মুড়া কচু স্থানীয় হেতিমগঞ্জ, বৈটিকর ও গোলাপগঞ্জ বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। আর মৌসুমের সময় ফুলবাড়ী পূর্বপাড়া বড় মোকাম জামে মসজিদের সামনে অস্থায়ীভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা মুড়া কচু ও লতি বিক্রি করে থাকে। পাইকারগণ ছাড়াও যাত্রী সাধারণকেও গাড়ি থামিয়ে মুড়া কচু ও লতি কিনতে দেখা যায়।
হাউজিং ব্যবসায়ীরা যেভাবে প্রতিনিয়ত জমি ভরাট করছেন তা অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে মুড়া কচু চাষ উপযোগী জমি একসময় নি:শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।