বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : স্বপ্নে মাছ দেখেছিলাম, পরে ঘুমের মধ্যে সেগুলো কেটেছি। পুলিশের কাছে এ কথাগুলো বলেন সিলেটের গোয়াইনঘাটে মা ও দুই সন্তান খুনের ঘটনায় আহত গৃহকর্তা হিফজুর রহমান (৪০)। শনিবার দুপুর ১টার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য দেন এসপি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমরা ঘটনার কয়েকটি বিষয় নিয়ে তদন্ত করেছি। এর মধ্যে হিফজুরের মামার সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ। আমরা তদন্তে এখন পর্যন্ত যে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি, সেগুলো হিফজুরের বিপক্ষে পাওয়া গেছে। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানকে খুন করেছেন বলে তদন্তে উঠে আসছে। খুনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গৃহকর্তা হিফজুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি আহত অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকদের সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করেছি। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর রোববার তাকে আদালতে পাঠানো হবে। পরে তাকে রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হবে।
এসপি ফরিদ উদ্দিন আরো বলেন, ঘটনার পরের একটি ছবিতে দেখা গেছে হিফজুর রহমান নিজের স্ত্রী ও সন্তানের ওপরে অনেকটা শুয়ে আছেন। পা অন্যদের গায়ের উপর ও তার পায়ে মাটি লাগানো। তাতে অনুমান করা যায় হত্যার সময় ঘরের ভেতরে অনেকক্ষণ ঘুরাফেরা করেছে তিনি। এছাড়া ঘরে একমাত্র আলামত পেয়েছি বটি ও দা। বটি ও দায়ে শুধুমাত্র রক্তের দাগ ছিলো। বাচ্চাদের ঘাড়ের কোপগুলো এবড়ো-থেবড়ো। সাধারণ বটি ও দা দিয়ে কোপালে এটা সম্ভব।
নিহত আলিমা বেগম পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আলিমার সঙ্গে পেটের বাচ্চাটিও মারা গেছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আমরা নয়টি আলামত থেকে হত্যার ঘটনায় হিফজুরকে গ্রেফতার দেখিয়েছি। এর মধ্যে প্রথমত, ঘটনার সময় বাইরে থেকে কোনো লোক ঘরের ভেতরে ছিলো বলে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়ত, ঘরের দরজা বাইরে থেকে ভাঙার আলামত নেই। তৃতীয়ত, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া ও বিবাদ ছিলো। চতুর্থত, হিফজুর প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঘর থেকে বের হতেন পানের টাকা উঠাতে। যার সঙ্গে যাওয়ার কথা তাকে কল করে বলেছেন, পানের টাকা নিতে আজকে যেতে পারবো না। পঞ্চমত, তিনি ভোরে ৩ জনকে কল করে বলেছেন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা। ষষ্ঠ, তার মানসিক সমস্যার কথা বলা হলেও চিকিৎসকরা মানসিক সমস্যার খোঁজ পাননি। সপ্তমত, তার দেহের আঘাত গভীর না, সেগুলো নিজে নিজেই করা সম্ভব, মত দিয়েছেন চিকিৎসকরা। অষ্টম, তার ঘরে কেউ ঢুকলে আগে তাকে মারার কথা। নবম, বাসার সবার ওপর তিনি অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিল, তার পায়ে মাটি ছিল, তাতে বুঝা যায় হত্যার সময় তিনি হাঁটাহাটি করেছেন। এতেই বোঝা যায় হত্যাকাণ্ড তিনিই ঘটিয়েছেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, হিফজুর রহমানের কাছে আমরা হাসপাতালে সেদিনের ঘটনার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ওই দিন রাতে তিনি স্বপ্নে মাছ দেখেছেন। পরে সেগুলো কেটেছেন হিফজুর। কথাবর্তায় এমন অসংলগ্ন পাওয়া গেছে। তিনি মানসিক সমস্যা রয়েছে কি না, সে জন্য আমরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।
উল্লেখ্য, গত বুধবার সকাল ৭টার দিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি গ্রামে হিফজুর রহমানের বাড়িতে তার স্ত্রী আমিনা বেগম (৩০), ছেলে মিজানুর রহমান (১২) ও ছোট মেয়ে তানিশা বেগমের (৩) লাশ পাওয়া যায়। সে সময় হিফজুরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই রাতেই গোয়াইনঘাট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা করেন নিহত আলিমা বেগমের বাবা আইয়ুব আলী।