Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-06-23T08:52:33Z
গোলাপগঞ্জলিড নিউজ

ঐতিহ্য হারাতে বসেছে ফুলবাড়ি !

বিজ্ঞাপন
অস্থায়ী বাজার থেকে মুড়া কিনতেছেন ক্রেতারা

ফাহিম আহমদ : ভোর হলেই কৃষি জমিতে নেমে পড়েন কৃষকরা। এরপর ধীরে ধীরে পানির নিচ থেকে মুড়া, কচু, লতা তোলতে থাকেন। সুন্দর করে কাঁচি দিয়ে কেটে মুড়ার গুড়া পানি দিয়ে পরিস্কার করা হয়। হালি হালি করে বাঁধা হয় মুড়া আর আটি বাঁধা হয় লতার। 

সকাল ৯ টার দিকে রাস্তার পাশে দীর্ঘ লাইন ধরে ১০-১২ জন স্থানীয় কৃষক মুড়া, কচু, লতা নিয়ে বসে থাকেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাদের ব্যবসা। প্রতিদিন একেকজন কৃষক ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার মুড়া, কচু, লতা বিক্রি করে থাকেন বলে জানান তারা। চারা থেকে বিক্রির উপযোগী হতে ৪-৫ মাস সময় লেগে যায়৷ মুড়া থেকে লতা বের হতে ২ মাস সময় লাগে বলে জানান তারা। একেক হালি মুড়া আকার বেধে ৩০ থেকে ২'শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। আর লতা ৩০ থেকে ৬০ পর্যন্ত বিক্রি হয়। পথচারীদের কাছে খুবই পছন্দের এ মুড়া, লতা, কচু। 

গোলাপগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার ফুলবাড়ি পূর্বপাড়া গ্রামে কয়েক যুগ থেকে স্থানীয় কৃষকরা মুড়া, কচু, লতার উৎপাদন করে থাকেন। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের ব্যস্ততম সড়ক গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ফুলবাড়ি বড়মোকামের পাশে প্রতিদিন লাইন ধরে কৃষকরা অস্থায়ী এ বাজার বসিয়ে থাকেন। সড়ক দিয়ে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। যাতায়াত কালে শখ করে মানুষ গাড়ি থামিয়ে কিনে নিয়ে যান মুড়া, কচু, লতা। যুগ যুগ ধরে ফুলবাড়ির মুড়া, কচু, লতা দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে পরিচিত।

ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি

এদিকে গত কয়েক বছর থেকে ঐতিহ্যের ফুলবাড়ির মুড়া, কচু, লতার উৎপাদন কমে যাচ্ছে বলে জানান কৃষক ও স্থানীয়রা। এর মূল কারণ জায়গা বরাট করে বাসা-বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে জায়গা। সেই সাথে কমে যাচ্ছে এসবের উৎপাদন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে পানি জমে যায় জমিতে। পানি যাওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় জমিতেই পঁচে যায় মুড়া, কচু, লতা৷ 

সরেজমিন মঙ্গলবার (২২ জুন) মুড়া, কচু, লতার অস্থায়ী এ বাজারে গেলে দেখা যায়, রাস্তার এক পাশে দীর্ঘ লাইন ধরে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। 

অস্থায়ী বাজারে মুড়া,কচু ও লতা নিয়ে বসছেন কৃষকরা

স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানান, দিন দিন জায়গা কমে যাওয়ার কারণে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এভাবে আরও কয়েকবছর চলতে থাকলে হারিয়ে ফেলব ঐতিহ্যের এ ফসল। কোন ভাবেই সামান্য জায়গায় অন্য জমিতে আমরা কয়েকজন এ ফসল চাষ করে থাকি। বিনিময়ে জমির মালিককে দিতে হয় টাকা। তবে যে ফসল চাষ করা হচ্ছে তা থেকে ভাল আয় হয় বলে জানান তারা৷ আয় ভাল হলেও দিন দিন জায়গা কমে যাচ্ছে। সেই সাথে কমে যাচ্ছে উৎপাদন।

হাশির আলী স্থানীয় কৃষক। অন্যের জমিতে ৭-৮ বছর থেকে চাষ করে আসছেন মুড়া, কচু, লতা। এবার ২৬ শতক জায়গা অন্যের কাছ থেকে ১ বছরের জন্য ২ হাজার টাকায় নিয়েছেন। এ জায়গায় চাষবাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। সর্বশেষ তারা ১৫-২০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে জানান তিনি। 

টিপু মিয়া নামের আরও একজন কৃষক জানান, এবার তিনি ২ কিয়ার জমিতে চাষ করেছেন। যার জন্য মালিককে ১ বছরের জন্য দিতে হয়েছে ৫ হাজার টাকা। আর চাষবাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। প্রতিদিন ৩-৪ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি। সবশেষে তারা দেড় লাখ টাকার মত লাভ হবে বলে জানান তিনি। 

মাইক্রোবাস থামিয়ে মুড়া কিনতে আসেন রাহাত নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, আমি এনিয়ে কয়েকবার এখান থেকে মুড়া, লতা কিনেছি। খুবই স্বাদ। দামেও স্বস্তা। অন্যান্য মুড়া, লতায় চুলকায়। তবে এখানের মুড়া, লতায় চুলকায় না৷ তাই খুব ভালা লাগে। 

উপজেলা কৃষি অফিসার আনিসুজ্জামান জানান, আমি নতুন যোগ দিয়েছি। ফুলবাড়ির মুড়া, কচুর অনেক সুনাম আছে আমি আগেই জানতাম। তবে তাদের কিছু সমস্যা আছে সেটা জানলাম। আগামী ৩০ তাং এখানকার কৃষকদের নিয়ে আমরা একটি পরামর্শ সভা করব। যেখানে তাদেরকে কি ভাবে এর উৎপাদন বাড়ানো যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ