বিজ্ঞাপন
জাহিদ উদ্দিন : গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণে প্রবাসীর শখের বসে তৈরী 'চান মিয়া আনারস বাগানটি যেন এখন সিলেটের নতুন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। দিন যত যাচ্ছে সবুজে ভরপুর দৃষ্টিনন্দন এই আনারস বাগানের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন স্থানে৷
দিন দিন বাগানের সৌন্দর্য্য আকৃষ্ট করছে ভ্রমণ পিপাসুদের। প্রতিদিন এই বাগানটির অপরুপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে বিভিন্ন স্থান থেকে আগমণ ঘটছে হাজারো পর্যটকদের।
জানা যায়, ২০১৮ সালে এনআরবি ব্যাংক কর্মকর্তা রইছ উদ্দিনের আমন্ত্রণে তার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে যান গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ দত্তরাইল গ্রামের আব্দুল মতিন চান মিয়ার ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রাসেল আহমদ। সেখানের টিলায় টিলায় আনারস বাগান দেখে আনারস বাগান করার ভূত চাপে মাথায়। বিষয়টি ব্যাংক কর্মকর্তা রইছ উদ্দিনকে জানালে তিনিও আনারস বাগান করতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সেখানে থেকে ফিরে এসে বাগান করার কথা জানান রাসেল আহমদের বাকি ৭ভাইকে। তাদের সকলের পরামর্শে বাড়ির পাশে থাকা ৬টি টিলার ৬৫ বিঘা জমিতে শুরু হয় আনারস বাগান তৈরীর কাজ। রইছ উদ্দিনের পরামর্শ ও সহযোগিতায় শ্রীমঙ্গল থেকে আনা আনারসের চারা রোপন করেন বাগানে।
আনারস বাগানের উদ্যোক্তা যুক্তরাজ্য প্রবাসী রাসেল আহমদ জানান, শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে গিয়ে দেখি ছোট ছোট টিলাতে আনারসের বাগান। এসব বাগান দেখে আমিও মনে মনে ঠিক করি আমাদের টিলাগুলোতে আনারস বাগান করবো।
প্রায় ৬৫ বিঘা (টিলা) জায়গা প্রথমে আনারসের চারা রোপন করে বাগানের যাত্রা শুরু করি। পরে আরও ১০বিঘা জমি বাড়াই। প্রথম বার রোপনের পর আনারসের ফুল পেতে ১৮ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে আমাদের। প্রথম বছর তেমন উৎপাদন হয়নি যা হয়েছিল আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, মসজিদ মাদ্রাসায় বন্টন করে দেওয়া হয়৷ ২০২০ সাল থেকে আনারস বিক্রি শুরু করা হলে চলতি বছর পর্যন্ত সব মিলিয়ে অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ হলেও গেল বছরই প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার ফল উৎপাদন হয়েছে। এবছর উৎপাদন ভালো হয়েছে। আশা করছি এ বছর ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার আনারস বিক্রি পারবো।
এদিকে চান মিয়া আনারস বাগানের ভালো ফলনে গোলাপগঞ্জের মানুষের জন্য নতুন ধার উন্মোচন হয়েছে। এ উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়ন টিলা বেষ্টিত। আর এসব টিলার মাটি আনারস চাষে উপযোগী। খালি পড়ে থাকা টিলাগুলোতে আনারস বাগান করলে একদিকে উদ্যোক্তারা সফলতার মুখ দেখবেন অন্যদিকে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সরেজমিন শুক্রবার চান মিয়া আনারস বাগানে ঘুরে দেখা যায়, উচুঁ নিচু টিলায় আনারস বাগানের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে কয়েক শতাধিক পর্যকের আগমণ ঘটেছে। তারা আনারস বাগানের টিলায় উঠে অনবদ্য বাতাসে আনারসের ঘ্রাণ নিচ্ছেন আর প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করছেন।
হবিগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা ফাহাদ মারুফ জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে গোলাপগঞ্জের আনারস বাগানের কথা শুনে বাগানটি দেখতে এসেছে। এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে। টিলাতে উঠে আনারস বাগান দেখার পাশাপাশি আশপাশের প্রকৃতিক সৌন্দর্য্য আমায় মুগ্ধ করেছে।
সিলেট শিববাড়ি থেকে আসা রিমা আক্তার বৃষ্টি নামের এক তরুণী জানান, করোনার কারণে সব বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ। ঈদেও কোথাও যাওয়া হয়নি। নিজেকে বন্দি বন্দি লাগছিল। আনারস বাগানটি দেখতে এসে মনটা ভরে গেলো। বাগানে ঘুরতে আসা হেতিমগঞ্জের আরিফ আহমদ জানান, আগে আমরা আনারস কিনতে বা আনারসের বাগান দেখতে শ্রীমঙ্গল যেতে হতো। এখন নিজ উপজেলাতে থেকেই আনারস কিনতে পারছি। বাগানের তত্ত্বাবধায়ক রাসেল আহমদের ভাতিজা কাওছার রাজা রতন বলেন, প্রতিদিনই হাজারো পর্যটক আনারস বাগান দেখতে ভীড় জমাচ্ছেন।তারা বাগান ঘুরে দেখার পর যাওয়ার সময় আনারসও ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান জানান, ঢাকাদক্ষিণের দত্তরাইল আনারস বাগানটি আমি পরিদর্শন করেছি। হানি কুইন জাতের আনারসের খুবই ভালো ফলন হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, গোলাপগঞ্জে প্রায় ইউনিয়ন টিলা বৃষ্টিত। আর এসব টিলার মাটি আনারস চাষে উপযোগী। এসব টিলায় আনারস বাগান যারা করতে ইচ্ছুক তাদের আমরা যথাসম্ভব পরামর্শ ও সহযোগিতা করবো।