বিজ্ঞাপন
ফাহিম আহমদ : পুরো সড়ক জুড়ে ছোট-বড় গর্ত। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সেসব গর্ত যেন জলাশয়ে রূপ নিয়েছে। কোনো রকমে ভারসাম্য রক্ষা করে হেলেদুলে চলছে গাড়ি। কাদায় আটকে কাত হয়ে যায় সিএনজি অটোরিকশা। অর্ধেক গেলে অর্ধেক যায়না। কিছু পথ গাড়িতে কষ্ট করে গেলেও বাকি পথ কাদার মধ্যে দিয়ে হেটে হেটে যেতে হয়। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই স্থানীয় অটোরিকশা চালকেরা অটোরিকশা বন্ধ করে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। এতে আরও বেশি দুর্ভোগ পুহাতে হয় মানুষকে। এই একটি মাত্র সড়কের কারণে কুশিয়ারা পাড়ের মানুষ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে আজ বঞ্চিত। বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষা, উন্নত চিকিৎসা থেকে। দুর্ভোগটা ৪-৫ বছরের নয়। এক যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে। কষ্ট সহ্য করতে করতে ভুক্তভোগীরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন। কিছুতেই পরিত্রাণ মিলছে না। দিন দিন সড়কের অবস্থা বেহাল হচ্ছে।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা পারের দুটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে কটলীপাড়া-বসন্তপুর সড়ক। এছাড়াও বিয়ানীবাজার, বড়লেখা ও ফেঞ্চুগঞ্জের সাথে গোলাপগঞ্জের সংযোগও স্থাপন করেছে এই রাস্তাটি। বাদেপাশা ইউনিয়নের বাগলা গ্রাম থেকে শুরু করে শরীফগঞ্জের বসন্তপুর পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এই সড়কটি কাদা মাটিতে একেবারে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কুশিয়ার পাড়ের মানুষ।
জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় গেলে আবারো তৎকালীন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ এ রাস্তাটির অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
এরপর কটলীপাড়া থেকে বাদেপাশা ইউনিয়নের মোল্লাকোণা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তার পিচঢালাই সম্পন্ন করেন। কিন্তু এর পরেই অচেনা কারণে বন্ধ হয়ে যায় রাস্তাটির কাজ। সেই যে বন্ধ হলো আর খোঁজ নেই।
শুক্রবার (১৮ জুন) বিকেলে সরেজমিন গেলে সড়কের বেহাল অবস্থা চোখে পড়ে। স্বচক্ষে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না উপজেলার এ দুই ইউনিয়নের মানুষ কতটা কষ্টে আছেন।
জানা যায়, দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন সড়কটি পাকাকরণের জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি৷ বরং পায়ের জুতোই ক্ষয় হয়েছে বেশি। সময় নষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে ঘুরতে ঘুরতে আজ তারা ক্লান্ত। অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন। অতিষ্ঠ হয়ে ভুক্তভোগীরা মানববন্ধনও করেছেন।তাতে কি লাভ হবে?
ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের আর কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। তাদের একটাই চাওয়া এ সড়কটি কাজ করে দেয়া হোক। কি কারণে সড়কটির কাজ হচ্ছে না তারা জানতে চান। তবে কি তারা বর্তমান সরকারের উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত থাকবেন। দেশে কতকত উন্নয়ন হচ্ছে। আর অবহেলিত হয়ে আছে এ দুই ইউনিয়ন। তারা জানান, এ দুই ইউনিয়নের অনেক কিছুর উন্নয়ন হয়েছে। তবে এ সড়কটির উন্নয়ন হয়নি। তারা জোর দাবি জানান সড়কটি যেন কাজ করে তাদের দুর্ভোগ লাঘব করা হয়।
প্রায় ৬ বছর পর ৩ মাস আগে প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছেন বাগলা উত্তরপাড়া গ্রামের শামিম আহমদ। একেবারেই কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, 'আজ সিলেট উপশহরে আমার এক আত্মীয় মারা গেছেন। আমি ৩ টি সিএনজি অটোরিকশাকে কল দিয়েছি আমাদেরকে সিলেট নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু একটিও অটোরিকশা পাইনি। এর মূল কারণ হচ্ছে রাস্তা। এ রাস্তার কারণে কোন গাড়ি চলাচল করতে পারে না। এভাবে আর কতদিন?
তোয়াকুল আহমদ হুসাইন একই এলাকার যুবক। ঠেলাগাড়ি নিয়ে হাটু বরাবর কাদা টেলে টেলে আসতেছেন। আর বলতেছেন, আমাদের দেখার কেউ নেই। আমরা অবহেলিত। কার কাছে আমরা চাইব। আমাদের জন্য কি সরকারের একটুও মায়া হয়না। সরকার তো অনেক উন্নয়ন করতেছেন। তাহলে আমাদের এই সড়ক পাকা করে দিলে কি হয়।'
সিএনজি অটোরিকশা চালক খালেদ আহমদ বলেন, 'প্রতিটা দিন গাড়ি ওয়ার্কসপে নিতে হয়। প্রতিদিন ৭-৮'শ টাকা আয় হয়। এর মধ্যে মালিক রোজ ৪ শ টাকা। কাজ করা হয় ১-২'শ টাকার। হাতে আর থাকেই বা কত। আমরা বাংলাদেশে বাস করতেছি না। আমরা ভারতের বাইরে বসবাস করতেছি।'
উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান জানান, 'কাচা রাস্তা পাকা করতে হবে। প্রকল্প ছাড়া তো সম্ভব নয়। একটা প্রকল্পের প্রস্তাব আছে। প্রকল্পটা একনেক হয়ে গেছে। করোনার কারণে একনেকটা আটকিয়ে গেছে। গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে হওয়ার কথা ছিলো। তবে এখন একনেকটা কবে হবে বা আদৌ হবে কি না সেটা বলা যাচ্ছে না। তবে আমাদের চেষ্টা আছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। দেখা যাক কি হয়।'