Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: সোমবার, ১৭ মে, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-05-17T09:07:11Z
লিড নিউজসিলেট

অপহরণ করে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো তারা, টার্গেট ছিল উবার চালকরা

বিজ্ঞাপন

জাহিদ উদ্দিন: সিলেটে ছিনতাইকারীর একটি চক্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সেই সাথে মোগলাবাজার থানা এলাকায় সংঘটিত আলোচিত রাইড চালক রেদোয়ান রশিদ চৌধুরী হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এবং হত্যা ও পরিকল্পনাকারী গ্রেফতার সহ আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। মোগলাবাজার থানার এসি পলাশ রঞ্জন দে ও ওসি মো. শামসুদ্দোহা পিপিএম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। 

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিয়ানীবাজার উপজেলার আদিনাবাদ কাপন গ্রামের মৃত আকদ্দছ আলীর পুত্র গোলাম কিবরিয়া রাজু (৩৫)। বর্তমানে তিনি সিলেটের শাহপরাণের উত্তর বালুচরে বসবাস করে আসছেন। তিনি পেশায় একজন মোটর সাইকেল রাইডার। মোটর সাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত ৮ এপ্রিল রাত্রীবেলা গোলাম কিবরিয়া রাজু ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালিয়ে আয় করার জন্য বাসা থেকে বের হলে আর বাসায় ফিরে যাননি। এর একদিন পর গত ৯ এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে মোগলাবাজার থানা পুলিশ মোগলাবাজার থানাধীন সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের গফুরের বাঁধ এলাকার যাত্রী ছাউনীর ভিতর থেকে রাজুকে মারাত্মক রক্তাক্ত অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। 

খবর পেয়ে রাজুর আত্মীয়-স্বজন হাসপারাতালে এসে রাজুকে সনাক্ত করেন। এরপর রাজুর বড় ভাই গিয়াস আহমদ মোগলাবাজার থানায় এসে একটি মামলা (মামলা নং- মামলা নং-০৭, তারিখ-১০-০৪-২০২১খ্রিঃ) দায়ের করেন। এ মামলার তদন্তভার মোগলা বাজার থানার 
এসআই কৌশিক সরকারকে দেওয়া হয়।

গোলাম কিবরিয়া রাজু প্রায় ০১ মাস সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে বাসায় নিয়ে যান তার 
আত্মীয়-স্বজনরা। তাকে বাসায় নিয়ে গেলেও মস্তিষ্কে আঘাতের ফলে সে এখনও ভারসাম্যহীন অবস্থায় আছে বলে জানা যায়।

জকিগঞ্জ থানার কামাল পুর গ্রামের মৃত নোমান রশিদ চৌধুরীর পুত্র রেদোয়ান রশিদ চৌধুরীও (২৮) রাজুর মত সিলেটে বোনের বাসায় বসবাস করে মোটর সাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত ১১ মে মোটরসাইকেল নিয়ে বাসা থেকে বের হলে আর বাসায় ফিরে যাননি।

তাকেও খুঁজে না পেয়ে গত ১২ মে সন্ধ্যায় ভগ্নিপতি কাজী আব্দুর রহমান কোতয়ালী থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়রী (জিডি নং - ৮৭০) করেন। 

এরপর গত ১৩ মে রেদয়োন রশিদ চৌধুরীর লাশও একই স্থানে রাত সাড়ে ১১টার দিকে কচুরিপানাযুক্ত কাদা পানির ডোবায় পাওয়া যায়। 

এঘটনায় তার ভগ্নিপতি কাজী আব্দুর রহমান অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের (মামলা নং-১২, তারিখ-১৫/০৫/২০২১খ্রিঃ) করলে মোগলাবাজার করেন।



এদুটি ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে মাঠে তৎপরতা শুরু করে পুলিশ। 


এরপর পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত ১৫মে সন্ধ্যায় কদমতলী এলাকা থেকে মোগলাবাজার থানার ছিছরাকান্দি গ্রামের লয়লু মিয়ার পুত্র মজিবুর রহমান (২৩) কে
গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে পুলিশ জিজ্ঞাবাদ করলে সে ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করে।

সে পুলিশকে জানায়, তার সাথে মোগলাবাজার থানার ধোপাকান্দি গ্রামের মৃত খলিল মিয়ার পুত্র এনাম আহমদ (২৩) গত ৮ এপ্রিল রাত ১০টায় দিকে দক্ষিন সুরমা থানাধীন হুমায়ুন রশিদ চত্তর এলাকা থেকে গোলাম কিবরিয়া রাজুকে মোটর সাইকেল ভাড়ায় নিয়ে যায়। মোগলাবাজার থানাধীন মোহাম্মদপুর গফুরের বাঁধ এলাকায় সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশে যাত্রীছাউনীর সামনে মোটর সাইকেল থামিয়ে তাকে যাত্রীছাউনীর পিছনে নিয়ে মাথায় হাতুরী দিয়ে আঘাত করে মারা গেছে ভেবে ডোবায় ফেলে রেখে মোটর সাইকেলটি নিয়ে যায় তারা। 

একইভাবে গত ১১ মে রাত্র সাড়ে ১০টার দিকে দক্ষিন সুরমা থানাধীন হুমায়ুন রশিদ চত্তর এলাকা থেকে রেদোয়ান রশিদ চৌধুরীকেও মোটর সাইকেল ভাড়ায় নিয়ে মোগলাবাজার থানার মোহাম্মদপুর গফুরের বাঁধ এলাকায় সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশে যাত্রীছাউনীর সামনে নিয়ে একই কায়দায় তাকেও যাত্রীছাউনীর পিছনে হাতুরী নিয়া মাথায় আঘাত হত্যা করে লাশ কচুরিপনা যুক্ত কাদা পানির ডোবায় ফেলে চলে যায়। 

মজিবুর রহমানের তথ্যের প্রেক্ষিতে সহযোগী এনাম আহমদকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার আছিরগঞ্জ বাজার থেকে ১৫মে রাত ১১টায় গ্রেফতার করে পুলিশ। 

এরপরদিন ১৬ মে রাতে তাদের দেওয়া তথ্য মতে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানা এলাকার খলাগ্রাম গ্রামের জুয়েলুর রহমানের হেফাজত হতে রেদোয়ান রশিদ চৌধুরী মোটর সাইকেল (সিলেট হ-১২-২৭০২) উদ্ধার করে তাকে আটক করা হয়।

একই উপজেলার ধুলিজুরা গ্রামের রায়হান মিয়া (২৮) এর হেফাজত হতে গোলাম কিবরিয়া রাজুর মোটর সাইকেল (রেজিঃ নং সিলেট মেট্রো-হ-১২-২২৪৫) উদ্ধার করে রায়হান মিয়াকেও আটক করা হয়।

পরে তাদের দেওয়া তথ্য মতে ১৬ মে (রোববার) সকালে ঘটনাস্থল মোগলাবাজার থানাধীন মোহাম্মদপুর গফুরের বাঁধ এলাকায় সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশে যাত্রীছাউনী পিছন থেকে রেদোয়ান রশিদ চৌধুরীকে হত্যায় এবং গোলাম কিবরিয়া রাজুকে হত্যার চেষ্টায় ব্যবহৃত একটি হাতুরী ও ২টি পাথরের টুকরা উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। এরপর আসামী মুজিবুর রহমান এর কর্মস্থল দক্ষিণ সুরমা এলাকাস্থ কদমতলী টার্মিনালের তাজমহল রেস্টুরেন্টে গিয়ে তল্লাশী করে উপস্থিত রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারদের মোকাবেলায় তার ব্যবহৃত ছিনতাইকৃত সৌরভের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। 

গোলাম কিবরিয়া রাজুর মোবাইলটিও দক্ষিণ সুরমা থানাধীন দশহাল এলাকা হতে সামছুল ইসলাম (১৮) নামক একজন কোরআনের হাফেজের নিকট থেকে আসামী মুজিবুর রহমান কর্তৃক ২০০০ টাকায় বিক্রয় করা মটরলা এনডয়েড ওয়ান সেটটি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সামছুল ইসলামকেও পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। 

এ দুটি ঘটনায় মোঘলাবাজার থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান মোগলাবাজার থানার ওসি মো. শামসুদ্দোহা পিপিএম।
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ