বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : উদ্বোধনের আগেই কয়েকলাখ মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক বহুল প্রত্যাশিত জগন্নাথপুর-সিলেট সড়কে ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার থেকে ওই সড়কের ভাঙনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে ক্ষোভের ঝড় উঠে। এক মিনিট চার সেকেন্ডের ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, জগন্নাথপুর-সিলেট সড়কের জগন্নাথপুর অংশের ভবেরবাজার সেতু এলাকায় পাকাসড়কের বিভিন্ন অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ব্লক থেকে পাকা সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সড়কটি উদ্বোধনের আগেই ফাটল দেখা দেয়ায় ক্ষোভের ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
জগন্নাথপুরের শাহারপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগ মাসুম হোসেনের ফেসবুক আইডিতে ভিডিওটি আপলোড করা হয়। মাসুম হোসেন বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে মাসুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সিলেটটুডে জগন্নাথপুর প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, রোববার সকালে আমার এক ছোটভাই সদ্য নির্মিত পাকাকরণ জগন্নাথপুর-সিলেট সড়কে জগন্নথপুরের ভবেরবাজার সংলগ্ন সেতু এলাকায় ভাঙনের ভিডিওটি আমার নিকট পাঠিয়েছে। ভাঙনের দৃশ্যটি দেখে খুবই কষ্ট পেলাম। উদ্বোধনের আগেই এক মাস যেতে না যেতে জগন্নাথপুরবাসীর বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত সড়কটি ভেঙে যাচ্ছে। দেশের বাহিরে থাকলেও নিজের নাড়িপুতা এলাকার প্রতি সকল সময় ভালবাসা আর শ্রদ্ধা রয়েছে। নিজ এলাকায় নিন্মমানের কাজ করে সরকারি অর্থ লুটপাট মেনে নেয়া যায় না। তাই অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে ভিডিওটি আপলোড করেছি ফেসবুকে।
এদিকে এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর রোববার রাতে জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক পৌরশহরের ইকড়ছই আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মুজিবুর রহমান মুজিব তার ফেসবুক আইডিতে ভাঙনের ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। মুজিবুর রহমান লিখেছেন, জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ-রশিদপুর সড়কের জগন্নাথপুর অংশ সংস্কারে বিগতদিনে দুই/তিন কোটি টাকা বরাদ্দ হতো। এবার কাজের মান ভালো করতে মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন।কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা দুর্নীতিবাজ এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমির হোসেনের কারণে সড়কটি উদ্বোধনের আগেই ভেঙ্গে গেল। যা আমাদেরকে বিব্রতকর ও লজ্জায় ফেলেছে। আমরা সড়কের কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুনীতি ও তদারকির দায়িত্বে থাকা আমির হোসেনসহ দুর্নীতি দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে জোর দাবি জানাচ্ছি।
সোমবার সড়কের কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা জগন্নাথপুর উপজেলা উপ সহকারী প্রকৌশলী আমির হোসেন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সড়কের পাশে একটি দেয়াল থাকায় সেখানে বৃষ্টির পানি জমে সড়কের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে মেরামত করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও এলাকাবাসী জানান সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে জগন্নাথপুর-সিলেট (জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ-রশিদপুর) সড়কে বেহাল দশা দেখায়। সংস্কারের অভাবে প্রায় অচল হয়ে পড়ে সড়কটি। এলাকাবাসী ও শ্রমিকদের ধারাবাহিক মানববন্ধবসহ গণপরিবহন কর্মসূচী পালন করা হয়। এই সড়ক দিয়ে জগন্নাথপুরের প্রায় চারলাখ মানুষ বিভাগীয় সিলেট ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করে আসছিলেন।
২০১৯ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা অংশের ১৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য দরপত্র আহবান করা হলে মাদারীপুরেরর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হামীম সালেহ (জেভি) অংশ নেয়। এসময় দ্রুত সড়কের কাজ বাস্তবায়ন করতে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত দরে ২৫ কোটি টাকায় তাদেরকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে সড়কে কাজ শুরু করে চলতি বছরের ৩১ মার্চ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কাজ শেষ হয় ঈদের এক সপ্তাহ আগে। ১৯ মে সড়কের জগন্নাথপুর উপজেলা অংশের শেষ হওয়া কাজ উদ্বোধন করার কথা ছিল পরিকল্পনা মন্ত্রীর।লকডাউন বাড়ায় এ কর্মসূচি স্থগিত রয়েছে।
অপর দিকে বিশ্বনাথ অংশের ১৩.৯ কিলোমিটার অংশে সাড়ে ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দে কাজ পায় শাওন এন্টার প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু করে ৩১ মে কাজ শেষ করার কথা।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সহ সভাপতি রব্বানী মিয়া বলেন, সড়কে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে এ বিষয়ে একাধিকবার এলজিইডিতে অভিযোগ করলেও আমাদের কথা কেউ শুনেনি। সড়কের কাজ শেষ পর্যায়ে চলে আসলে আমরা সাতটি স্পটে ভাঙ্গনের চিত্র উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করি। তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যান চলাচলের আগেই এমন ভাঙ্গন চিত্রে আমরা হতাশ।
জগন্নাথপুর উপজেলা অংশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার আবু বক্কর বলেন, সড়কের সামান্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা তা সংস্কার করছি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার বলেন, সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত অংশ সোমবার সরেজমিনে দেখে ঠিকাদারকে ভাঙন অংশ সংস্কার করতে বলা হয়েছে। কাজে কোন অনিয়ম হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
সৌজন্যে : সিলেটটুডে২৪