বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : ঊর্ধ্বখী মুরগির দাম এখন কমতে থাকলেও একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে সবজির দাম। বাজারে ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজিই মিলছে না। বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। দোকানগুলোতেও সাজানো থাকছে থরে থরে সবজি। এর পরেও বাড়তি দামে সবজি কিনতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। বাজারে এসে অল্প পরিমাণে সবজি কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের।
গতকাল শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্বল্প আয়ের মানুষের আমিষের প্রধান উৎস ফার্মের মুরগির দাম আরেক দফা কমেছে। কিছুদিন আগেও যে পোল্ট্রি মুরগি ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল গতকাল শুক্রবার পাওয়া গেছে ১৫০ টাকায়। প্রতি কেজি পোল্ট্রি মুরগিতে কমেছে ৪০ টাকা। ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগি পাওয়া যাচ্ছে ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে। এই মুরগিরও দাম কমেছে কেজিতে ৫০ টাকা। লাল লেয়ার মুরগিও বিক্রি করতে হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে। মুরগির পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো ১১০ থেকে ১১৫ টাকা ডিমের ডজন পাওয়া যাচ্ছে।
দাম কমার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে মুরগির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে কমেছে। মাঝখানে কিছু দিন সরবরাহ কমে গেয়েছিল এ জন্য দামও বেড়েছিল। এভাবে সরবরাহ বাড়তে থাকলে মুরগির দাম আরও কমে যাবে। বাজারে প্রচুর পরিমাণে শীতের সবজি আসলেও স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে সবজির দাম। ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজিই মিলছে না। গাজর, টমেটোর মতো সবজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজিতে ।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গছে, দু-একটি সবজির দাম কমলেও বেশির ভাগ সবজি গত সপ্তাহের দরেই বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি শিম ১৪০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল পাওয়া গেছে ৮০ টাকা। আলুর দাম ৫ টাকা কেজিতে বেড়ে হয়েছে ৩০টাকা। গোল বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, পাতাকপি ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা। চাল কুমড়া প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, কাকরোল ৮০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা ও পেঁপের কেজি ৩০ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
অপরিবর্তিত রয়েছে শাকের দামও। লাল শাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর নতুন আসা পালন শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা, পুঁইশাক ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। শীতের সময়ে যে পরিমাণ সবজি বাজারে আমদানি থাকার কথা সে পরিমাণ আসছে না। ফলে সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পেঁয়াজের দামও স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এদিকে বাজারে গত সপ্তাহের চেয়ে ২০ টাকা কেজিতে কমেছে কাঁচামরিচের দাম। গত সপ্তাহে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া কাচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এছাড়া শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, রসুনের কেজি ৮০ থেকে ১৩০ টাকা, দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। চায়না আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। কাঁচা হলুদের কেজি ১৬০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইন্ডিয়ান ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। দেশী ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।
তবে স্থিতিশীল রয়েছে মাছ ও গোশতের দাম। গরুর গোশত এখনো ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খাসির গোশত ৮৫০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজারে সবচেয়ে সস্তায় মিলছে পাঙ্গাশ মাছ। ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে চলছে বেচাবিক্রি। এ ছাড়া তেলাপিয়া ১৪০-১৫০, রুই ছোট ২২০, রুই বড় ২৮০ থেকে ৩৫০, পাবদা ৪০০-৫০০, চিংড়ি ৪৫০ থেকে ৮০০ এবং শিং মাছ ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। চাষের ট্যাংরা মাছ ৪৬০ টাকা। বাজারে ভোজ্যতেলের প্রতি লিটার খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। আর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেলের লিটারও একই দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের মতো ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। এছাড়া প্যাকেট চিনি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়।
ডাল, তেল ও চিনিসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নিশ্চিত করতে টিসিবির ট্রাক সেল অব্যাহত রেখেছে। তবে এ দফায় তেল ও ডালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সরকারি সংস্থাটি। প্রতি লিটার তেলে ১০ টাকা এবং কেজিতে ডালের দাম ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ভোক্তাদের টিসিবির ২ লিটার তেলের বোতল কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকার বদলে ১১০ টাকায়। আর ২ কেজি মসুর ডাল কিনতে হচ্ছে ১১০ টাকার বদলে ১২০ টাকায়। তবে চিনি ও পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
সংবাদ সূত্র : নয়া দিগন্ত