বিজ্ঞাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যের প্রস্তাবিত কমিটি অনুমোদনের আগেই নানা বির্তকের মুখে পড়েছে। উপজেলা কমিটিতে স্থান পাওয়া অধিকাংশ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সোশাল মিডিয়ায় লেখালেখি ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
প্রস্তাবিত কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তারা অনেকেই অনুপ্রবেশকারী, বিএনপি জামাতের সমর্থিত বলে অভিযোগ করছেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া এ প্রস্তাবিত কমিটিতে দূর দিনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের স্থান হয়নি বলেও অনেকে অভিযোগ তুলছেন। এতে ক্ষোভ ও হতাশার দানা বাঁধছে তৃণমূল অবহেলিত ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে। তারা এ প্রস্তাবিত কমিটি অনুমোদন হলে গণহারে পদত্যাগের হুমকিও দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ৭১ সদস্যবিশিষ্ট প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি ৯জন, যুগ্ম সম্পাদক পদে ৩জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ৩জন, সহ-সম্পাদক পদে ১৯ জন এবং সদস্য পদে ৩৫ জনকে রাখা হয়েছে। কমিটিতে জায়গা হয়নি সম্মেলনের সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী, আগের কমিটির সম্পাদক পদের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাদের।
এব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ এম এ ওয়াদুদ এমরুল বলেন,গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটির প্রায় মাঠের রাজনীতিতে ছিলেন না। প্রস্তাবিত কমিটির কয়েকজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে অনুপ্রবেশকারীও। কিন্তু যেসকল নেতাকর্মীরা দুঃসময়ে দলের পাশে ছিলেন, বিভিন্ন সময় জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, সেসকল পরিক্ষিত ত্যাগী, নেতাকর্মী প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। তা অত্যান্ত দুঃখজনক। আমি জেলা আওয়ামীলীগের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা মনসুর আহমদ বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত পূর্নাঙ্গ কমিটিতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। যারা দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে ছিলনা তাদের নাম প্রস্তাবিত কমিটিতে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী অনেকের নাম রাখা হয়েছে। আশাকরি জেলা আওয়ামীলীগ এ বিষয়গুলো তদন্ত করে একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি আমাদের উপহার দিবেন, যে কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে।
এদিকে গত ৫ মে প্রস্তাবিত কমিটির ৪জনের নাম বাদ দিতে জেলা আওয়ামীলীগ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন আমুড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। এই অভিযোগে আমুড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সহ সকল ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকগণ স্বাক্ষর করেন।
এই অভিযোগে উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান পাওয়া নাজিম লস্কর (দপ্তর সম্পাদক), কামাল আহমদ (সদস্য), আব্দুল হামিদের (সদস্য) সহ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করে তাদের নাম বাদ দেওয়ার দাবি জানান। এই অভিযোগ পত্র তারা বলেন, এই ৪জন বিএনপি ও জামাতের সক্রিয় লোক ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদের কাছের লোক হওয়ায় তাদের প্রস্তাবিত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আমুড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য সোহেল বক্স জানান, বিগত সবকটি নির্বাচনে যারা বিএনপির হয়ে কাজ করেছিলো তারাও প্রস্তাবিত কমিটি স্থান পেয়েছে দেখে আমি হতভম্ব হয়েছি। তাহলে কি উপজেলা আওয়ামীলীগকে ধ্বংস করিতে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছ। আমি দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি কামনা করছি।
আমুড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল সিদ্দিকী বলেন, যারা ইউনিয়নের আওয়ামীলীগেরও কোন সদস্য ছিলোনা তারাও উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান পেয়েছে৷ উপজেলা আওয়ামীলীগকে ধ্বংস করতে একটি মহল অনুপ্রবেশকারীদের বিভিন্ন কৌশলে কমিটিতে ঢুকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি কামনা করছি।
আমুড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরান হোসেন বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটির কয়েকজনের নাম দেখে আমি অবাক হয়েছি। যারা বিগত দিন বিএনপি জামাতের হয়ে মাঠে কাজ করেছে কিন্তু তারা এই কমিটিতে স্থান পেয়েছে। বিষয়টি অবগত করতে ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামীলীগ সহ বিভিন্ন দায়িত্বশীলদের কাছে আমাদের এই অভিযোগ দিয়েছি। আশা করিছি উনারা তদন্ত করে অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দিবেন।
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদের মুঠোফোনে বার বার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি। এজন্য এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৯সালের ১৩ নভেম্বর গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম অধিবেশন সমাপ্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় অধিবেশন সম্পন্নের জন্য উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন নির্ধারণ করা হয়। এরই আলোকে উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও পৌরসভার কাউন্সিলরগণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের জন্য ভোটের প্রস্তুতি নেন। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন উদ্যোগ নেন সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি গঠনের। এ লক্ষ্যে উপজেলা সম্মেলন কক্ষে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। তবে সেখানে কোন সমঝোতা হয়নি। পরে ২০১৯ সালের ১৮ডিসেম্বর সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ৩ বছর মেয়াদি কমিটিতে সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরীকে সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়।
দীর্ঘ প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে অপূর্ণাঙ্গ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গতা পাবে এবং এই কমিটিতে ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের জায়গা হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।