বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটে আদালতপাড়ায় আইনজীবী পরিচয় দানকারী শংকু রানী সরকার লিলি নামের এক নারী প্রতারককে আটক করেছেন জনতা। প্রতারক ওই নারী এক গৃহকর্মীর কাছ থেকে ছেলেকে জামিন পাইয়ে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় অর্ধ লাখ টাকা। বুধবার বিকেল ৪টার দিকে সিলেট আদালতপাড়ার বার হল নং-২ এর সামনে তাকে আটক করা হয়।
শংকু রানী সরকার লিলি সিলেটের মেজরটিলায় এন আর টাওয়ারে ৩৫/২ নং বাসায় ভাড়াটে থাকেন। সিলেটে দীর্ঘদিন থেকে তিনি আইনি সহায়তা দেয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে অনেক নিরীহ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
তবে সিলেট জেলা বার আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে শংকু রানী সরকার লিলিকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়নি। দুপক্ষের সম্মতিতে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
জানা গেছে, এক মাস আগে সিলেটের মিরাবাজারের একটি বাসায় ভাড়াটে থাকা গৃহকর্মী শিল্পী বেগমের অটোরিকশা চালক ছেলে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। তার গাড়িতে অবৈধ পণ্য পাওয়া যায়। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে আরেকজনের মাধ্যমে শংকু রানী সরকার লিলির সঙ্গে পরিচয় হয় গৃহকর্মী শিল্পী বেগমের। এসময় লিলি নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দেন এবং শিল্পী বেগমের ছেলেকে জামিন পাইয়ে দেয়ার জন্য ৪৫ হাজার টাকার চুক্তি করেন। পরে এক মাসে শিল্পী বেগম মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে টাকা জমিয়ে ৩-৪ কিস্তিতে ভুয়া আইনজীবী লিলিকে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে দেন। কিন্তু লিলি মামলার শুনানির তারিখগুলো নানা টালবাহানায় পার করতে থাকেন।
বুধবার (২১ এপ্রিল) ছিলো শিল্পী বেগমের ছেলের মামলার আরেকটি শুনানির তারিখ। বুধবার তার ছেলেকে জামিন পাইয়ে দেয়ার কথা চূড়ান্ত করেন প্রতারক লিলি। কিন্তু বুধবারও ছেলের জামিন না হওয়ায় সিলেট বার হল নং-২ এর সামনে লিলির কাছে ৪৫ হাজার টাকা ফেরত চান শিল্পী বেগম। এতে লিলি ক্ষিপ্ত হয়ে শিল্পী বেগমকে মারধর শুরু করেন। এসময় ঘটনাস্থলে আইনজীবী ও লোকজন জড়ো হলে শিল্পী বেগম বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেন। তখন আইনজীবী ও জনতা প্রতারক লিলিকে আটক করেন।
এদিকে, আটকের পর প্রতারক লিলি উত্তেজিত হয়ে নিজেকে একাধারে আয়কর আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও বিশ্বনাথ কলেজের অধ্যাপিকা পরিচয় দেন। এসময় তার গলায় ‘ইন্টারন্যাশনাল হিউমেন রাইটস’ মানবাধিকার সংস্থার একটি পরিচয়পত্র ঝুলতে দেখা যায়। এটি সবাইকে দেখিয়ে লিলি নিজেকে ওই সংস্থা সম্পাদিত পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দেন। পরে তাকে পুলিশের ভয় দেখালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের ভুল শিকার করেন এবং ওই ভুক্তভোগী গৃহকর্মীর টাকা ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে মুক্তি পান।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বার আইনজীবীর সমিতির সভাপতি বলেন, আমরা ওই প্রতারক মহিলাকে পুলিশের হাতেই সোপর্দ করতাম। কিন্তু তার কান্নাকাটি আর মাফ চাওয়া দেখে এবং টাকা ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে মুচলেকা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেই।
তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে আইনি সহায়তা চাওয়া মানুষদেরও সচেতন হতে হবে। যে কেউ আইনজীবী পরিচয় দিলেই তার হাতে টাকা-পয়সা দিয়ে দিতে হবে কেন? ঠিক জায়গায় ঠিক মানুষের কাছে খুঁজে খুঁজে আসতে হবে। রাস্তাঘাটে তো উকিল বসেন না। উকিল বসার নির্ধারিত স্থান আছে। নির্ধারিত স্থানে এসে যে কোনো আইনজীবীর শরণাপন্ন হলেই কেবল মানুষজন দালালদের খপ্পর থেকে মুক্তি পাবেন এবং প্রকৃত আইনি সহায়তা পাবেন।