Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-04-28T17:02:16Z
গোলাপগঞ্জ

গোলাপগঞ্জে 'মৃত্যুপুরী ৮ কিলোমিটার সড়ক', ৮ মাসে ১৩ মৃত্যু

বিজ্ঞাপন

ফাহিম আহমদ: একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। কেউ মরছে আবার কেউ আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। যারা মারা যাচ্ছে তারা পরিবার অন্ধকার করে দিয়ে যাচ্ছে। আবার যারা আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে পরিবারের মাঝে বেঁচে আছে তারা যন্ত্রণা নিয়েই দিন পার করছেন।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের ৮ কিলোমিটার জায়গায় যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এই অংশে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। কিছুতেই যেন থামছে না দুর্ঘটনা। গত ৮ মাসের হিসেব অনুযায়ী এ সড়কে ঘটেছে মর্মান্তিক দুইটি সড়ক দুর্ঘটনা। যে দুই দুর্ঘটনায় ৯ টি তরতাজা প্রাণ সড়কে ঝরেছে। সর্বমোট ছোট-বড় দুর্ঘটনায় ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটে এ সড়কে। এর মধ্যে উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৌঘরীতে দুই দুর্ঘটনায় ৬ জন, ফুলবাড়ি ইউনিয়নের মোল্লাগ্রামে ৪ জন, পৌর শহরের কদমতলীতে ২ জন ও গোলাপগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ সড়কের রাঙাডহর বাজারে একজন মারা যান।

গত বছরের (২৯ আগস্ট) শনিবার উপজেলায় সবচেয়ে বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। যে দুর্ঘটনায় একে একে ৫ টি তরতাজা প্রাণ চলে যায়। (২৯ আগস্ট) শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৌঘরী এলাকার ওয়াসিমা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বড়লেখাগামী (সিলেট-গ ১১-০০৩৫) একটি বাসের সঙ্গে গোলাপগঞ্জের রানাপিং বাজার থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা একটি সিএনজি অটোরিকশার (সিলেট-থ ১১-৪১৫৩) মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষে অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার চালকসহ ৩ জন ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন আরও দুজন।

নিহতরা হলেন- সিএনজি অটোরিকশা চালক উপজেলার সদর ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে বাহার উদ্দিন (৪০)। উপজেলার অপর দু’জন ফুলবাড়ি ইউনিয়নের হাজীপুর লরিফর গ্রামের মৃত আজমল আলীর ছেলে লাল মিয়া (২৭) ও তজম্মুল আলীর ছেলে জাকারিয়া আহমদ (৩০)। তারা দু’জন আপন চাচাতো ভাই।

অন্য দু’জন কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে বাহাউদ্দীন (৫০) ও একই ইউনিয়নের বীরদল মাঝপাড়া গ্রামের প্রবাসী আব্দুল আউয়ালের ছেলে মাহফুজ আহমদ (১৭)।

এদিকে ভয়াবহ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এর ঠিক ৪ মাস পর উপজেলায় ঘটে যায় আরও একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটনা। যে ঘটনায় এক শিশুসহ প্রাণ হারান ৪ জন। বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৫ টার দিকে উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের মোল্লাগ্রামে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সিমেন্ট বুঝাই একটি ট্রাককে দ্রুত গতিতে ছুটে আসা একটি মাইক্রোবাস পেছন দিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। সাথে সাথে বিকট শব্দে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লেগে যায়। এতে গাড়ির ভিতরেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ৩ জন।

বিকট শব্দ শুনে পাশের কলোনির একটি শিশু ঘর থেকে দৌড় দিয়ে বের হলে মাইক্রোবাসের সিলিন্ডারের একটি টুকরো প্রায় ১শ গজ দূর উড়ে গিয়ে শিশুটির উড়ুতে ঢুকে যায়। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিলে সেখানেই সে মৃত্যুবরণ করে।

নিহতরা হলেন- বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের বারইগ্রামের মৃত কুনু মিয়ার ছেলে রাজন আহমদ (২২), একই গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে ও দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসের চালক সুনাম আহমদ (২৬) এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের রফিপুর গ্রামের মঞ্জু মিয়ার শিশু পুত্র হাসান আহমদ (৮)। কানাইঘাট উপজেলার তালবাড়ি পুর্বকোনা গ্রামের মুক্তার হোসেনের ছেলে মারজান আহমদ (২৯)।

গেল ২০২০ সাল শেষ হয়েছে উপজেলার মানুষকে শোক সাগরে ভাসিয়ে। শুধু এই মর্মান্তিক দুটি সড়ক দুর্ঘটনা নয়। ঘটেছে আরও কয়েকটি ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এ বছর সড়ক দুর্ঘটনায় আর কেউ মারা না গেলেও অনেকে মারাত্মক ভাবে আহত হয়ে এখনও বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন।

২০২১ সালের (১৬ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার। উপজেলার গোলাপগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ সড়কের ফাহিম কমিউনিটি সেন্টারের সামনে একটি মোটরসাইকেল আতহার আলী (৬৫) নামে এক বৃদ্ধকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হোন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আতহার আলী উপজেলার পৌর এলাকার রনকেলী নুরুপাড়া গ্রামের মৃত লখই আলীর ছেলে।

গত ৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) সকাল ৮টায় পৌর শহরের কদমতলি এলাকায় সিলেটগামী একটি পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় দুইজন আহত হোন। এ ঘটনায় পৌর এলাকার ঘোষগাঁও গ্রামের মৃত মখদ্দছ আলীর ছেলে আলাউদ্দিন (৫০) নামের এক বৃদ্ধ গুরুতর আহত হোন। ৫দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষ পর্যন্ত গত ১৩ এপ্রিল (মঙ্গলবার) না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।

এদিকে একই জায়গায় গত (১০ এপ্রিল) শনিবার দুপুর ১২ টার দিকে অবৈধ টমটমের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন পৌর এলাকার ফুলবাড়ি পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত ওহিদ আলীর ছেলে শহিদ আহমদ (৩৪)।

তিনিও ১০ দিন সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত (২০ এপ্রিল) মঙ্গলবার মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মারা গেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) সকাল ১১টায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৌঘরী এলাকার সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে পাথর বুঝাই ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজি অটোরিকশা চালক সাজু মিয়া (১৮) নিহত হয়েছেন। নিহত সাজু মিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের আলমাছ আলীর ছেলে।

শুধু এ কয়েকটি দুর্ঘটনা নায়। গত ৮ মাসে উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ৮/১০ টির মত দুর্ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন প্রায় ২০/২৫ জন।

এসব ঘনঘন দুর্ঘটনার একমাত্র কারণ চালকদের অদক্ষতা বলে মনে করেন উপজেলা নিরাপদ সড়ক চাই নিসচা’র সাংগঠনিক সম্পাদক, সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন মাহমুদ।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত উপজেলায় যে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে এর পিছেন চালকদের অদক্ষতা সবচেয়ে বড় কারণ। কোথায় কিভাবে গাড়ি চালাতে হয় চালকরা জানে না। অদক্ষ চালক আর অবৈধ গাড়ির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ