বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : বিএনপির নেতা এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের পাঁচ বছর পূর্ণ হলো আজ (১৭ এপ্রিল)। এখনো তাকে ফিরে পাওয়ার আসায় মুখিয়ে আছেন তার স্বজনরা। এই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়ে ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন সেই বিশ্বাস স্ত্রী ও সন্তানদের।
সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকার বনানী থেকে ব্যক্তিগত গাড়িচালক আনসার আলীসহ রহস্যজনকভাবে ‘নিখোঁজ’ হন।
ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের সেই ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিলের বর্ণনা-
বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে তার গাড়িচালক আনসারসহ নিখোঁজ হন।
বনানী থানার তৎকালীন এসআই সাইদুর রহমান জানান, রাত ১২টার পর থেকে ইলিয়াস আলীর সেলফোনে কল দিয়ে পরিবার ও আত্মীয়-পরিজন তা বন্ধ পান। তবে তার প্রাইভেট কারটি মহাখালী সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। গাড়ির ভেতরে পাওয়া চালক আনসারের মোবাইল ফোন (০১৭১১-২৭২৯৮৫) সূত্রে জানা যায় গাড়িটি ইলিয়াস আলীর।
রাত সোয়া ২টার দিকে ইলিয়াস আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব শিমুল বিশ্বাসকে জানানো হয়। তবে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
বিএনপি গুলশান অফিসের তৎকালীন মিডিয়া কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার ও শাইরুল কবীর খান জানান, রাত ৯টার দিকে ইলিয়াস আলী তার চালকসহ ড্রাইভারসহ গাড়ি নিয়ে বনানীর বাসা থেকে বের হন। কিন্তু রাত ১২টার পর থেকে পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এদিকে, ইলিয়াস আলীকে পাওয়া যাচ্ছে না- --এ খবর পরিবার-স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছানোর পর সবার মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
রাত ২টা ৩৫ মিনিটে সেলফোনে ইলিয়াস আলীর ছোটভাই পাপ্পু জানান, ``গাড়ির অবস্থান দেখে মনে হয়, সম্ভবত তিনি বাসায় (বনানী রোড# ২/১ বাসা# ৩) ফিরছিলেন।``
তিনি আরও জানান, রাত দেড়টা পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করে চালক আনসারের সেলেফোনে কল করার পর সেটি এসআই সাইদুর ধরেন এবং জানান গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এসআই সাইদুর তাদের বাসায় এসে ইলিয়াস আলীর সেলফোন নাম্বার নিয়ে গেছেন। নাম্বারের সূ্ত্রে তার অবস্থান ট্র্যাক করার চেষ্টা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদি গভীর রাতে বলেন, ``আমি বাসায় ছিলাম না। উনি বাসা থেকে রাত পৌনে ১০টায় বেড়িয়ে যান। পরে থানা থেকে ফোনে জানানো হয়, তার গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এখনও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ``
এদিকে, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, ঘটনা জানার পর তিনি র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান ও পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকারের সঙ্গে কথা বলেছেন।
রিজভী জানান, পুলিশের আইজি ও র্যাবের ডিজি এ খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, র্যাব ও পুলিশ ঢাকা শহরের সম্ভাব্য সব জায়গায় ইলিয়াস আলীর খোঁজ করছে। তাকে খুঁজে বের করতে র্যাব-পুলিশ সম্ভাব্য সবকিছু করবে। বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বলেও জানান।
রিজভী আরও বলেন, ইলিয়াস আলীকে খুঁজে না পাওয়ার ঘটনা শুনে আমরা সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেছি। এই বিষয়টিতে আমরা ক্ষুব্ধ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ইলিয়াস আলীর সন্ধান চেয়ে উচ্চ আদালতে রিটও করা হয়। পুলিশ বেশ কয়েকবার আদালতে প্রতিবেদনও দাখিল করে। এরপর একসময় বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।
এদিকে ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে গতকাল (১৭ এপ্রিল) সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনের আহ্বায়ক মখন মিয়ার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নিখোঁজের পাঁচ বছর হয়ে গেলেও সরকার এখন পর্যন্ত ইলিয়াস আলীর বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারছে না। এতেই প্রমাণিত হয়, বিএনপির রাজনীতিকে ধ্বংস করতেই তাঁকে গুম করা হয়েছে।
জিভয়েস২৪/এসএইচ