বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটে সরকারি উদ্যোগে নির্মাণ করা হচ্ছে ৪৩টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য প্রচারের লক্ষ্যে নির্মাণাধীন প্রতিটি মসজিদে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৪১ লাখ থেকে ১৫ কোটি কোটি ৬১ লাখ টাকা। বিভাগে সবমিলিয়ে ৫৮৫ কোটি ৭৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয়ে মসজিদগুলো নির্মাণ হবে।
সারাদেশে এরকম ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সবগুলো মসজিদ একই ডিজাইনে নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণশৈলী দেখে সহজে বুঝা যায় এটি বিশেষ ধরনের মসজিদ। এরই মধ্যে দক্ষিণ সুরমায় নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লাগোয়া ৪০ শতক জায়গার উপর অনন্য স্থাপত্যশৈলীর তিনতলা মসজিদটি নজর কাড়ছে সবার।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সিলেটের পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রসারে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রথমধাপে যেসব মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা মসজিদ এর অন্যতম।
দক্ষিণ সুরমা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল আলম বলেন, “দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তারই সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামী শিক্ষার প্রসার ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি বাংলাদশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে গণপূর্ত অধিদপ্তর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সুবিশাল এসব মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক ভবনে নারী ও পুরুষের আলাদা ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা থাকবে। থাকবে লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, কোরআন হিফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা এবং বিদেশি পর্যটকদের আবাসন। এছাড়া মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্রও থাকবে এই কমপ্লেক্সে। ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধাও রাখা হয়েছে মডেল মসজিদে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র আরও জানায়, সিলেট বিভাগে মোট ৪৩টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হবে। প্রত্যেক উপজেলায় একটি ও জেলা সদরে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৪টি রয়েছে। যার মধ্যে ১৩ উপজেলায় ১৩টি এবং জেলা সদরে একটি। সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলাসহ ১২টি, হবিগঞ্জ জেলায় ৮ উপজেলাসহ ৯টি এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৭ উপজেলাসহ ৮টি মসজিদ নির্মাণ হবে।
সিলেট গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী ইকবাল শিকদার জানান, জেলা সদরে মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা। উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ ব্যয় ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি মসজিদ একই ডিজাইনে নির্মাণ হবে।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা মডেল মসজিদের নির্মাণ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি মসজিদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় টাইলস, গ্রিল লাগানোর কাজ করছেন শ্রমিকরা। মিনারের কাজও চলছে। খুব শিগগিরই এই মসজিদের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গোয়াইনঘাট উপজেলা কর্মকর্তা মাওলানা হাবিব জানান, গোয়াইনঘাট উপজেলা মডেল মসজিদের তৃতীয়তলার ঢালাইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
তবে, জেলা মডেল মসজিদ, সদর উপজেলা মসজিদ, কানাইঘাট, বিয়ানীবাজার ও জৈন্তাপুরে মসজিদ নির্মাণের কাজ এখনও শুরু হয়নি। বাকি সব মসজিদের নির্মাণ অগ্রগতি কাজ ২৫ শতাংশের কম বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।
জানা গেছে, জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের স্থান এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে মেন্দিবাগে আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সের পাশের জায়গায় মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকার মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১ হাজার ২০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন। উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯০০ মানুষের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।
মসজিদ নির্মাণের পর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এসব মসজিদ পরিচালিত হবে। মসজিদের খতিব, ইমাম, মোয়াজ্জিন, খাদেম সবাই সরকারি বেতনভুক্ত হবেন।
প্রকল্প পরিচালক নজিবুর গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘দুই বছরের মধ্যে ৫৬০টি মডেল মসজিদের সবগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে। নির্মাণ শেষ হওয়া কয়েকটি মসজিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন শিগগিরই।’
২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রতি দেন শেখ হাসিনা। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প গ্রহণ করা হয়; যা পদ্মাসেতুর পর দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
প্রকল্পের বিবরণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, ৪০ শতাংশ জায়গার উপর তিন ক্যাটাগরিতে এই মসজিদগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে চারতলা, উপজেলার জন্য তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ-ক্যাটাগরিতে জেলা শহর এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এই মসজিদগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৩৬০ বর্গমিটার।
বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ বর্গমিটার। সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৫২ বর্গমিটার।
ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাস ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে এসব মসজিদ।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আনিসুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘এসব মসিজদ থেকে জঙ্গিবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করা হবে। সেইসঙ্গে মাদকের বিরুদ্ধেও সচেতন করা হবে। জঙ্গিবাদ বিরোধী, মাদক বিরোধী, যৌতুক, বাল্য বিবাহ এসবের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রচার করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘মডেল মসিজদ বলা হচ্ছে এজন্য যে, সবাই এই মসজিদকে অনুসরণ করবে। বিভিন গুরুপূর্ণ সামাজিক এবং ধর্মীয় বিষয়ে সেখানে প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক দেশে এরকম দৃষ্টিনন্দন একটা-দুইটা আইকনিক মসজিদ আছে। কিন্তু এখানে সবগুলো মসজিদই একরকম হবে। দেখেই বোঝা যাবে যে এটা বিশেষ মসিজদ। সারা বিশ্বে কোনো মুসলিম দেশে একসঙ্গে এরকম কর্মযজ্ঞ এখনও শুরু হয়নি।’