বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : গত কয়েকদিন ধরেই সারাদেশের সাথে সিলেটেও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্য নির্দেশনা পালনে ঢিলেমি চলে আসায় করোনার সংক্রমণ আবার বাড়ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এ অবস্থায় মাস্ক পরা নিশ্চিতে সিলেটে ফের মাঠে নামছে প্রশাসন।
সিলেট জেলা ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ হার বেড়ে যাওয়ায় সরকারিভাবে আবারও দেশজুড়ে মাস্ক পরার বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে আবার অভিযান শুরু হবে। এবার কঠোরতা দেখাতে শুরুতেই মাস্কবিহীন চলাফেরা করা লোকদের আইনের আওতায় আনা হবে। এমনকি পূর্বের ন্যায় বসানো হবে ভ্রাম্যমাণ আদালতও।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন কর্মসূচি দেশে শুরু হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে সকলকে মাস্ক ব্যবহারের কথা বলে আসা হচ্ছে। এর পরেও জনগণের মাস্ক পরায় অনাগ্রহতা দেখা দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, মাস্ক ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে গত ১৩ মার্চ বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর হার গত কয়েক মাসের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংক্রমণের হার রোধের জন্য সর্বক্ষেত্রে সবার মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাই সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়টি মনিটরিং করতে বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনওদের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।
এরপর থেকেই সিলেটে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরায় বাধ্য করতে আরও কঠোর হওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে জেলা প্রশাসন। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধির অংশ হিসেবে মাস্ক পরা নিশ্চিত করাসহ চালানো হবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সে ক্ষেত্রেও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত না করা গেলে বাড়বে জরিমানা, দেওয়া হবে জেল, এমন কঠোর নির্দেশনা রয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে।
এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম মাহফুজুর রহমান বলেন, সিলেটের জনগণের মাস্ক পড়া নিশ্চিত করতে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। একই সঙ্গে মাস্ক পরাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে চালানো হচ্ছে নানা প্রচারণা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম।
মাস্ক পরা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে রক্ষায় সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে এরই মধ্যে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, এরইমধ্যে আমরা সে মোতাবেক আরও কঠোর অবস্থানে যাব।
একই কথা বলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরীও। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা সিলেট মহানগর জুড়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সেই প্রচার প্রচারণা আরও বাড়নো হবে। এছাড়া আমরা কয়েকদিনের মধ্যে নগরীতে মাস্ক পড়া নিশ্চিত করতে ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো।
তিনি বলেন, সোমবার সকালে আমরা সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলামসহ স্বাস্থ্য বিভাগের সকলকে নিয়ে মিটিং করেছি। আগামী সপ্তাহ থেকেই সিলেট সিটি করপোরেশন কঠোর অবস্থানে যাবে
এ ব্যাপারে সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সিলেটের সর্বত্র মানুষের মধ্যে চরম উদাসীনতার কারণে ফের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে, এটা উদ্বেগজনক। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, সংক্রমণ একটু কমেছে বলে সবাই স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছি, যা মোটেই কাম্য নয়। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক জনসমাগমে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলায় চরম ঝুঁকি তৈরি করছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সচেতনতা জরুরি। পাশাপাশি এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।