বিজ্ঞাপন
‘বিয়ে’ শব্দটির সঙ্গে একধরনের আনন্দের মিশ্রণ রয়েছে। পূর্ণবয়স্ক একজন নারী বা পুরুষ বৈধভাবে জীবনসঙ্গী বেছে নেয় বিয়ের মাধ্যমে। বিয়ের আয়োজনে পরিবারেও আনন্দ বয়ে যায়। কিন্তু সেই বিয়ে আবার অনেক সময় হয়ে ওঠে কষ্টের। কখনো কখনো পছন্দ-অপছন্দে দ্বন্দ্বে পিষ্ট হতে হয় ছেলে বা মেয়েকে।
তরুণ মন ঘুরে ফেরে ডানা মেলে। স্বপ্নের ডানায় ঘুরতে ঘুরতে হয়ে যায় প্রেম বা ভালোবাসা। ভালোলাগা থেকে শুরু হওয়া জীবনের এই অধ্যায়ে যারা পা রেখেছেন তাদের রয়েছে নানা অভিজ্ঞতা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রেম নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বিপত্তি বাধে।
হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন, ‘যুদ্ধ এবং প্রেমে কোনোকিছু পরিকল্পনামতো হয় না’। জীবনে এমন বড় ঘটনা পরিকল্পনা ছাড়াই ঘটে যাওয়ায় পড়তে হয় বিপত্তিতে। বিপত্তি থেকে বিচ্ছেদের সাগরেও ভাসতে হয় অনেককে। অবশেষে দেবদাস বা কবিও হয়ে যান অনেক ব্যর্থ প্রেমিক। তাই হয়তো হুমায়ন লিখেছেন, ‘প্রতিটি সার্থক প্রেমের কবিতা বলতে বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে পায়নি, প্রতিটি ব্যর্থ প্রেমের কবিতা বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে বিয়ে করেছে।’
তবে বিয়ের ক্ষেত্রে যে শুধু প্রেম বা ভালোবাসা নিয়েই জটিলতায় পড়তে হয় এমন নয়। প্রেম-ভালোবাসার বাইরেও পাত্র-পাত্রী পছন্দ হতে পারে। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা যে কোনো পারিপার্শ্বিক কারণে বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রী পছন্দ হতে পারে।
কিন্তু প্রেম-ভালোবাসা হোক বা যে কোনোভাবে হোক; পছন্দের পাত্র-পাত্রীকে বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় বেঁকে বসে পরিবার। এমন সমস্যায় যারা পড়েছেন বা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের জন্য আজকের রম্য প্রতিবেদনের এই আয়োজন। পছন্দের পাত্র-পাত্রীকে বিয়েতে পরিবারকে রাজি করানোর কিছু উপায় তাদের জন্য:
১. আপনার বাবা-মা অথবা পরিবারের যিনি সিদ্ধান্ত দেন তিনি আপনার জন্য কেমন মেয়ে বা ছেলে পছন্দ করতে পারেন তা জানার চেষ্টা করুন। আপনার পছন্দের ছেলে বা মেয়ের মধ্যে সেই গুণগুলো থাকলে বুক ফুলিয়ে জোরে জোরে কয়েকবার হাঁফ ছাড়ুন। আর না থাকলে ভালা কোনো নাট্যদলে ভর্তি হয়ে অভিনয় শিখতে বলুন। যেন পরিবারের সামনে সেগুলো নিখুঁতভাবে অভিনয় করতে পারে।
২. আপনার মায়ের সঙ্গে বিশেষ খাতির জমিয়ে ফেলুন। তাকে পছন্দের পাত্র-পাত্রী সম্পর্কে জানান। তাকে জানিয়ে দিন, এখানে বিয়ে না হলে আপনি মায়ের কোল ছেড়ে সন্যাসী হয়ে যাবেন। দেখবেন আপনার মা আপনাকে সহযোগিতা করবে।
৩. বাবার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তাদের খুব ভালোভাবে বোঝান, কেন আপনাকে এই পাত্র-পাত্রী বিয়ে করতে হবে। ঘর থেকে মা আপনাকে সাপোর্ট দিলে এবং বাইরে থেকে বাবার বন্ধুরা তাকে বোঝালে দেখলে আপনি সুখের দরিয়া ডুবি-ডুবি করছেন।
৪. পরিবারের কর্তা যদি বড় ভাই হন তাহলে ভাবিকে পটানো একটু সহজ বটে। ভাবির পছন্দ বুঝে দু-একটা উপহার কিনে দিন। ভাবির গৃহাস্থলিতে হাতের কাজে একটু সহযোগিতা করুন। দেখবেন তিনি খুশি হয়ে গেছেন। এরপর ইনিয়ে-বিনিয়ে ভাবি রাজি করিয়ে ফেলতে পারবেন। তখন ভাইকে বোঝানোর দায়িত্ব ভাবির।
৫. আপনার পছন্দের পাত্র-পাত্রীকে বলুন, যেভাবেই হোক যে কোনো একটা চাকরি জোগাড় করতে। যাতে আপনার পরিবার এটিকে ভালোভাবে নেয় এবং বিয়ে-পরবর্তী জীবনে আর্থিক সংস্থান হয়।
৬. বেশি হতাশা লাগলে ফুটপথে ভাগ্য গণনাকারী হকার, জ্যোতিষী বা মুশকিলে আহসান কেন্দ্রের দাওয়াই নিতে পারেন। এবার আসা করা যায় বন্দুকের গুলি মিস হলেও দাওয়াই মিস না হয়ে পারবে না।
৭. এসবে কাজ না হলে বাবা-মাকে দেখিয়ে দেখিয়ে কিছুটা পাগলামি শুরু করুন। দেয়াল বা পিলারের সঙ্গে নিজের মাথায় আস্তে আস্তে আঘাত করুন। তবে ভাব ধরুন, যেন খুব জোরে আঘাত করছেন। যাতে তারা বুঝতে পারে, আর কোনোভাবেই আপনাকে ফেরানো সম্ভব হবে না।
৮. এর পরেও যদি পরিবার রাজি না হয় তাহলে দেশান্তরী হওয়ার হুমকি দিন। পরিবারকে জানিয়ে দিন, এখানে আপনার বিয়ে না হলে আপনি দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। আর কখনো দেশের মানুষকে এই ব্যর্থ মুখ দেখাবেন না।
৯. এখনো যদি দেখেন পরিবার রাজি হচ্ছে না, তাহলে বলতে হবে আপনি একেবারে সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে হাল ছাড়া যাবে না। এবার আপনাকে শেষ চেষ্টা করতে হবে। শেষ চেষ্টার আগে পছন্দের পাত্র-পাত্রীর সঙ্গে একবার দেখা করুন। কারণ, এটিই হতে পারে শেষ। দুজন মিলে শেষ চেষ্টার উপায় বের করুন।
১০. শেষ চেষ্টা হিসেবে আপনার পছন্দের পাত্র বা পাত্রীকে বলুন মিডিয়ায় খবর পাঠাতে। সাংবাদিকরা পৌঁছানোর আগেই ‘বিয়ের দাবিতে অনশন’, ‘আমাকে বিয়ে না করা পর্যন্ত অনশন চলবে’, ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ; বিয়ের দাবিতে অনশন’ বা এমন কোনো প্ল্যাকার্ড লিখে পাত্র বা পাত্রীকে আপনার বাড়ির সামনে বসতে বলুন। ব্যস সে ভাইরাল। এতক্ষণে আপনার সঙ্গে বিয়ে দিতে পরিবার রাজি না হলেও এবার ভাইরাল পাত্র বা ভাইরাল পাত্রীকে কোনোভাবেই হাতছাড়া করবে না আপনার পরিবার।
লেখক: পলাশ মাহমুদ।