বিজ্ঞাপন
গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি: গোলাপগঞ্জ পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রুহেল আহমদ বলেছেন, গোলাপগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের অসহযোগিতাই নৌকার এমন সূচনীয় পরাজয় হয়েছে। বহুমুখী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকাকে গোলাপগঞ্জে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এর পিছনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের কিছু প্রভাবশালী নেতা। মঙ্গলবার রাতে পৌরসভার ফুলবাড়িস্থ নিজ বাস ভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ কথাগুলো বলেন।
তিনি আরো বলেন, যখন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এম,পি যখন বক্তব্যে বলেছিলেন, দলের বিদ্রোহী ও বিতর্কিত কেউ নৌকা প্রতীক পাবেন না। তখন উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পরামর্শ নিয়ে আমি মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করি । জেলা আওয়ামীলীগ প্রার্থী তালিকায় কেন্দ্রে আমার নাম চার নম্বরে প্রস্তাব পাঠান। দলীয় মনোনয়ন পেতে কোন ধরনের লবিং তদবির করিনি । শুধু আমি নই এবার যারা মনোনয়ন পেয়েছিলেন তদবির লবিংয়ের কোন সুযোগ ছিলনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর নিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। পরবর্তীতে নিজেদের মনোনয়ন না পাওয়ার কারণ হিসেবে দুই বিদ্রোহী প্রার্থী ভুল তথ্য দিয়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করেছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীরা আসল সত্য জানতেন, যা গোপন করেছেন। তারা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছেন। আজকে শুধু মনোনয়ন না পাওয়ায় নৌকার বিপক্ষে, নেত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করেছেন। যা নৌকার পরাজয়ে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে সময় মাত্র এক মাস সময় পেয়েছিলাম। নির্বাচনী কাজে জেলা আওয়ামীলীগ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের দুই চার জন নেতাদের পেয়েছি। আর কিছু নেতা ছবি তুলে ফেইসবুকে পোষ্ট দিয়ে পরবর্তীতে অপর বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন। প্রভাবশালী দু’ এক নেতা বিশাল অংকের টাকা বিনিয়োগ করেন নৌকাকে আটকানোর জন্য যা সকল মানুষ এখন জানে ।
সর্বোপরি দলীয় অনেক নেতাদের অসহযোগীতা নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। এমনকি নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও নামমাত্র ছিল। নির্বাচনের দিন দুই চারজন আওয়ামীলীগ নেতা ছাড়া আর কাউকে পাইনি। মনোনয়ন দলীয়ভাবে দেওয়া হলেও ব্যক্তির উপর টার্গেট করা হয়েছিল। অনেকেই দল করে টাকা বানালেও তা দলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন ।
তিনি অভিযোগ করেন, আমার (ফুলবাড়ি) এলাকায় ভোটারদের আমার পক্ষে নিয়ে আসলে নির্বাচনের আগের রাত হঠাৎ করে পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। যা আমার ভোটে নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। নির্বাচনে অনেক প্রার্থী নৌকার ব্যানার পোস্টার ছিঁড়েছেন। অনেক জায়গায় কর্মীদেরও হয়রানি করা হয়েছে তারপরও আমি প্রশাসন বা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করিনি। কিন্তু আমি অবাক হয়েছি আমার এলাকায় নির্বাচনের আগের রাতে কাদের ইশারায় প্রশাসন এমন করলো।
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে প্রার্থী নির্বাচন ভুল বলে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। আমি প্রার্থী নতুন হতে পারি, কর্মী নতুন নয়। দুই যুগের অধিক ক্যারিয়ার আছে আমার রাজনীতিতে।নৌকার পরাজয়ের পর অনেকেই মায়া কান্না করছেন, কিন্তু নির্বাচনের সময় তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা যদি সত্যিকারের বঙ্গবন্ধুর কর্মী হতেন তাহলে নৌকাকে বিজয়ী করতে ঝাপিয়ে পড়তেন।
রুহেল আহমদ বলেন, আমার ভুল হতে পারে, সামনের দিনে ভুলগুলো শুধরে এগিয়ে যেতে চাই।
বিগত দিন পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সদ্য বহিস্কৃত সভাপতিকে কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে বার বার তাগদা দিয়েছিলাম কিন্তু তিনি কোন কর্নপাত করেন নি। যা জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ অবগত রয়েছেন। আগামীতে পৌর আওয়ামীলীগকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাবো। এ কমিটিতে সত্যিকারের কর্মীরাই স্থান পাবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের অসহযোগিতা যেমন ছিলো তেমনি নানা গুজব, অপপ্রচার অপরাজনীতি ও ব্যাপক টাকা ছড়াছড়িই নির্বাচনে নৌকার পরাজয়েরও কারন। কেন্দ্র জানতে চেয়েছে, শীঘ্রই পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন পরবর্তী প্রতিবেদন ও দলীয় কার্যক্রম সম্পর্কে লিখিতভাবে অবহিত করা হবে।
মো: রুহেল আহমদ বলেন, গোলাপগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে বহুমুখী ষড়যন্ত্রের মধ্যেও যারা নৌকায় ভোট দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং পৌরসভার সকল নাগরিকদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জামাচ্ছি। সেই সাথে নব-নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের অভিনন্দন জানাচ্ছি আশাকরি তারা জনরায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পৌরবাসীর উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করে যাবেন।