বিজ্ঞাপন
ফাহিম আহমদ: একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।এদিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে থাকে। সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিনটি পালনের নির্দেশনা থাকলেও যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ, কাপড় ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে পালন করে দিবসটি।
তবে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কলাগাছ, কাপড় ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করা হয় না৷ গুটি কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো ফুলবাড়ি আজিরিয়া ফাযিল ডিগ্রী মাদ্রাসা। ১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ মাদ্রাসা থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে আজ প্রতিষ্ঠিত। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন এ প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। তবে অনেকটা আক্ষেপ লাগে দীর্ঘ ১৬০ বছরেরও শহীদ মিনারের মুখ দেখেনি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনার না থাকায় শহীদদের স্মরণে শোক জানানো থেকে বঞ্চিত প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করা হাজারো শিক্ষার্থী। এতে করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভাষা আন্দোলনের চেতনা জাগছে না। তারা ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাসও জানতে পারছেন না।
উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ২০টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। আর বাকি ১৬০ টি বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার।
উপজেলায় ২৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১১টি স্কুল ও কলেজ, ৪টি ডিগ্রী কলেজ ও ১টি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ সহ মোট ৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। দাখিল মাদ্রাসা ১৮ টি, সিনিয়র মাদ্রাসা ৫টি ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ৯টি। এরমধ্যে ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে শহীদ মিনার। এছাড়াও ৬৮টি কিন্ডারগার্টেনগুলোর মধ্যে একটিতেও নেই কোনো শহীদ মিনার।
ফুলবাড়ি মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন রাজু বলেন, আমরা কোন দিবসে শহীদ মিনারের অভাবে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানাতে পারি না। বিদ্যালয়ে একটি শহীদ মিনার হলে আমরা এর গুরুত্ব বুঝতে পারব।
প্রতিষ্ঠানের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী উবায়দুল হক উবেদ বলেন, আমাদের পূর্বে যারা মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছেন তারাও শহীদ মিনার পাননি। আমরাও পাইনি। আমি অনুরোধ করব যারা বর্তমানে পড়ালেখা করছে বা আগামীতে পড়ালেখা করবে তাদের শহীদ মিনারের গুরুত্বটা বুঝার জন্য হলেও একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করার অনুরোধ করছি।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ইব্রাহিম আলী বলেন, সরকার থেকে যদি তারা শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেয় তাহলে হবে। আমাদের শহীদ মিনার করার মত কোন ফান্ড নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অভিজিৎ কুমার পাল বলেন, গোলাপগঞ্জের মাধ্যমিক যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও শহিদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ গোলাম কবির জানান, প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা প্রয়োজন। কিন্তু সরকারি বরাদ্দ না থাকায় প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হচ্ছেনা। আমি আগামীতে সকলের সমন্বয়ে শহিদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করবো।