বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটের চৌহাট্টায় অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে পরিবহর শ্রমিক-সিসিকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এবার মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবহণ শ্রমিকরা। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মবু বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শ্রমিক ইউনিয়নের একটি সূত্রে এ বিষয় জানা গেছে।
ওই সূত্র জানায়, মামলায় একমাত্র এজাহারনামীয় আসামি করা হবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। আর অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি রাখা হবে।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিতের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিলেট ভয়েসকে বলেন, আরিফুল হকের নেতৃত্বেই গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে, আমাদের শ্রমিকদের মারধর করা হয়েছে। আবাদের অনেক শ্রমিক আহত। তাছাড়া আমাদের শ্রমিকদের মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ আমাদের শ্রমিকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সে হিসেবে আমরা আদালতে মামলা করব এবং আরিফুল হককেই আসামি করব।
এর আগে অস্ত্রসহ যুবক আটকের ঘটনায় একটি, দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের উপর হামলার ঘটনায় একটি এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধরের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ৩ মামলার মধ্যে ১ টি মামলার বাদী সিসিকের উপ-সহকারী প্রকৌশলী দেবপদ রায় আর বাকি ২ টি মামলার বাদী পুলিশ। এসব মামলায় মোট ২৮ জনকে এজাহারনামীয় আসামিকরা পাশাপাশি আরো শতাধিক অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাতে এ মামলাগুলো করা হয়।
বুধবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ।
তিনি বলেন সিসিকের দায়ের করা মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ১০ জন, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ১৭ জন আর অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলায় একক আসামি ফয়সল আহমদ ফাহাদ (৩৮)।
প্রাথিমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ফাহাদ অস্ত্র নিয়ে আসার কোন কারণ জানিয়েছে কি না এমন প্রশ্নে ওসি এস এম আবু ফরহাদ বলেন, আমাদেরকে এমন কোন তথ্য সে দেয়নি। তাই তাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে।
এদিকে সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে পরিবহন শ্রমিক-সিসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার সময় গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে আগামী সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকে সিলেটে সকল ধরণের পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন পরিবহণ শ্রমিকরা।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭ টায় সিলেট ভয়েসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিত।
তিনি বলেন, ‘আমরা দুয়েকদিনের মধ্যে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেবো। আর সোমবার সকাল ৬ টা থেকে পরিবহণ ধর্মঘট পালন করবো। সিলেটের সকল ধরণের পরিবহণের মালিক-শ্রমিকরা মিলে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
এর আগে বুধবার দুপুরে সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় অবৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড উচ্ছেদকালে পরিবহন শ্রমিক ও সিটি কর্পোরেশন কর্মিদের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় অন্তত অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
নগর কর্তৃপক্ষ জানায় সিলেট সার্কিট হাউজ-বিমানবন্দর সড়ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বেশ কিছুদিন থেকে চৌহাট্টা এলাকা থেকে অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে নিতে পরিবহন শ্রমিকদের অনুরোধ জানানো হয়। এতে কর্ণপাত না করে উল্টো তাদেরকে স্ট্যান্ডের জায়গা দিতে প্রশাসন ও নগর কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানায় পরিবহন নেতারা।
সকালে সিটির শ্রমিকরা রাস্তা সম্প্রসারণ কাজে আসলে পরিবহন শ্রমিক নেতারা এতে বাধা দেন। সেই সাথে অবরোধ করে রাখে চৌহাট্টা আম্বরখানা সড়ক। পরে পুলিশ ও সিটি মেয়র এসেও পরিবহন শ্রমিকদেরকে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তারা সাড়া দেয়নি।
এ অবস্থায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে মেয়রের দিকে তেড়ে আসলে সংঘর্ষ বাধে। বেশ কিছু সময় ধাওয়া পালটা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের পর পিছু হটে পরিবহন শ্রমিকরা। এসময় রণক্ষেত্রের পরিণত হয় আশপাশের এলাকা। আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে চৌহাট্টা মাইক্রোবাস শ্রমিকনেতা আলী আকবর রাজন দাবি করেন, ‘আমরা সরে যেতে রাজি। কিন্তু অন্য কোথাও আমাদের গাড়িগুলো রাখার জন্য কিছু জায়গা দেয়া হলে আমরা সরে যাবো’।
আর সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, আমরা দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা করছি অবৈধভাবে দখল করা স্ট্যান্ডটি উচ্ছেদ করতে। তারা চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়কের পাশ দখল করে রাখার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটিতে যানজট লেগেই থাকে। আজ যখন উচ্ছেদ করতে আসি তখন শ্রমিকরা তাদের স্ট্যান্ডের জায়গা দিতে বলেন। কিন্তু আমাদের কথা হলো এখানে সকল গাড়ি প্রাইভেট পারমিট নিয়ে পরিবহন ব্যবসা করছে। পরে তাদের কথা না মানায় তারা হামলা চালায়।
এই ঘটনায় সিসিকের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নির্মাণ শ্রমিক অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানান মেয়র আরিফ।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার প্রেক্ষিতে পরিবহণ শ্রমিকরা বিকেল আড়াইটার দিকে সিলেটের বিভিন্ন সড়কে বাস-মাইক্রোবাস রেখে রাস্তা বন্ধ করে দেন। এরমধ্যে সিলেটের চণ্ডিপুল, হুমায়ূন রশীদ চত্বর, ইসলামপুর, মদিনা মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ করেন শ্রমিকরা।
পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দক্ষিণ সুরমা থানায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরিবহণ মালিক শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে নানা আলোচনা শেষে বিকেল ৪ টায় অবরোধ তুলে নেয়ার কথা জানান।
তথ্য সূত্র : সিলেট ভয়েস