বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : নাটোরের সিংড়া উপজেলার হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নের গুনাইখাড়া ভাটোপাড়া গ্রামের মৃত গাফফার আলীর স্ত্রী ফুলবিবি। একটি অভিযোগ হাতে নিয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে এসেছেন তিনি। অভিযোগ এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যের (মেম্বার) বিরুদ্ধে।
গত ২৩ জানুয়ারি দেশের প্রায় ৬৯ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার ঘর পেলেও পাননি ফুলবিবি। অথচ মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দ গৃহের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির কথা বলে এই বৃদ্ধার থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মেহের আলী। ১১ মাস আগে নেয়া এই টাকা ফেরত চেয়ে উল্টো বিপদে পড়েছেন এই বৃদ্ধা। এ বিষয়ে বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ফুলবিবি।
ইউএনও বরাবর করা লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ইউপি সদস্য মেহের আলী ফুলবিবির কাছ থেকে ঘর বরাদ্দের কথা বলে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্ত ঘর বরাদ্দ দিতে না পারেননি। বৃদ্ধা তার কাছ থেকে টাকা ফেরত চাইলে দিতে অস্বীকৃতি জানান মেম্বার। এমনকি মামলা করে টাকা আদায় করার জন্য ফুলবিবিকে হুমকি দিয়েছেন মেহের আলী। বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালেও তাদের কথায় কর্ণপাত করেননি মেম্বার।
১১ মাস আগে ইউপি সদস্য মেহের আলী ফুলবিবির কাছে এসে জানান, সরকার ভূমিহীনদের জন্য পাকাঘর করে দিচ্ছে। ঘর পেতে হলে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে আসো। টাকা না দিলে নামে ‘লাল কালি’ পড়ে যাবে। তখন আর চেষ্টা করেও পাওয়া যাবে না। তখন ফুলবিবির কাছে রসুন ও মটরশুটির খেতে কাজ করে জমানো কিছু টাকা ছিল। পরে একটি ছোট ছাগল বিক্রি করে দেন। ছাগল বিক্রির টাকাসহ ১০ হাজার টাকা তুলে দেন মেম্বার মেহেরের হাতে।
বৃদ্ধা ফুলবিবি বলেন, কদিন আগে শুনি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়ে গেছে। তখন মেহেরের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ধৈর্য ধরতে বলেন এবং টাকা নেয়ার কথা কাউকে বলতে নিষেধ করেন। আশ্বস্ত করেন, আগামীবার ঘর পাওয়া যাবে। সর্বশেষ ১৫ মাঘ টাকা ফেরত দেবেন বলেন মেম্বার মেহের আলী। পরে টাকা চাইতে গেলে টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেন। পরে বাধ্য হয়ে ইউএনও বরাবর অভিযোগ করেন। এই বৃদ্ধা বলেন, ‘এখন আর ঘর চাই না, টাকাটা ফেরত চাই।’
ফুলবিবির সঙ্গে আসা সাফা বেগমের কাছ থেকেও ঘর দেয়ার নাম করে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন ইউপি সদস্য মেহের আলী। তবে তিনি লিখিত অভিযোগ করেননি।
সাফা বেগম বলেন, ‘আমি যখন জানিয়েছি আমি তো ঘর পেলাম না তখন মেহের আলী বলেছিলেন, প্রথমবারের তালিকায় নাম না থাকলেও পরবর্তী দ্বিতীয় বা তৃতীয় তালিকাতে নাম অবশ্যই থাকবে। আপনি টাকা ফেরত চাইবেন না, সামনে ঘরই পাবেন। অথচ এখন টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করছেন। আমরা আমাদের কষ্টের টাকা ফেরত চাই।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মেহের আলী বলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ। ঘরের নাম করে আমি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি।’
হাতিয়ান্দহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুব-উল-আলম বলেন, ‘সিংড়ায় ঘর বরাদ্দে যাতে কোনো আর্থিক লেনদেন না হয় সেজন্য আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কঠোর নির্দেশনা আছে। অভিযোগকারী দুই নারী আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে মুজিববর্ষের কোনো ঘর বরাদ্দ হয়নি। এ বিষয়ে ফুলবিবির লিখিত ও সাফা বেগমের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সূত্র : জাগো নিউজ