Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০
সর্বশেষ সংষ্করণ 2023-12-15T12:54:02Z
গোলাপগঞ্জবিশেষ সংখ্যালিড নিউজ

গোলাপগঞ্জের ঐতিহাসিক বানরাজার বাড়ির যুদ্ধ

বিজ্ঞাপন

জাহিদ উদ্দিন : গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাদেপাশা ইউনিয়নে পূর্ব নোয়াই গ্রামের হাওরপারে অবস্থিত ঐতিহাসিক বানরাজার বাড়ি। এ বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তি সেনাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। এ বাড়িটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হয়ে দাড়িয়ে আছে। 

একাত্তরের অক্টোবরের শেষ দিকে যখন সারা বাংলায় পাকিস্থানের শাসক গোষ্ঠীর সাথে বীরত্বের সাথে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে চারিদিকে বিজয় লাভ করতে শুরু করেছে তখন ভারতের কুরিণখালা সীমান্ত দিয়ে প্রায় দুই শতাধিক মুক্তিসেনা পূর্ব সিলেটে প্রবেশ করেন। 

মুক্তিসেনারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে সিলেটের বিভিন্ন স্থানের আশ্রয় নেন। এসময় ২৫ জনের মুক্তি বাহিনীর একটি দল বিয়ানীবাজারের ঘাগুয়া গ্রামে আশ্রয় নেন। কিন্তু এই আশ্রয়ের খবর স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে চারখাই পাকিস্তানি ক্যাম্পে চলে যায়। বিয়টি মুক্তি বাহিনীর এই দল বুঝতে পারলে তারা পায়ে হেটে চলে আসেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার পূর্ব নোয়াই গ্রামে। 

এসময় তাদের আশ্রয় দান করেন বানরাজার বাড়িতে বসবাসরত বানরাজার জামাই নোয়াই গ্রামের আসদ্দর আলীর ছেলে নিমার আলী ও তার স্ত্রী ছায়ারুন নেছা। তারা ক্ষুধার্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তারা শুকনো খাবার প্রদান করেন। খাবার খেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন ঠিক তখনই রাজারদের সহায়তায় পাক হানাদার বাহিনী হামলা চালায়। 

এসময় পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের উপর একের পর এক গুলি করলে তারাও পাল্টা গুলি চালান। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সংখ্যায় অনেক ও শক্তিশালী ছিল। এর তুলনায় মুক্তিযোদ্ধারা অল্প ছিলেন তাই তারা পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ্য যুদ্ধে বেশি সময় ঠিকে থাকার কথা নয়। তারপরও বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর সাথে প্রাণপন লড়াই করেনঅ ওইদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলে। পাক সেনারা অনেকগুলো শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণও ঘটায়। 

এসময় অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত হলেও তারা পিছু হটেন নি। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি শেষ হয়ে গেলে তারা আত্মরক্ষার্থে বিভিন্ন দিকে ছুটে যান। এ যুদ্ধে শহীদ হন বালাগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযুদ্ধা মজিদ। তিনি লম্বা মজিদ নামে পরিচিত ছিলেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আমকুনা গ্রামের মনোহর আলীও এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। 

এরপরদিন বানরাজার বাড়ির মালিক মরহুম ইসমেদ আলীর জামাতা নিমার আলীকে এক রাজাকার ধরে নিয়ে যায় । মুক্তি বাহিনীকে আশ্রয় ও খাবার দেওয়ার অপরাধে নিমার আলীকে রাজাকাররা অমানবিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের মাত্রা এত বেশি ছিল যে নিমার আলী আর কখনো সুস্থ হতে পারেন নি। স্বাধীনতার কয়েক মাস পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 

ঐতিহাসিক বানরাজার বাড়ির যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন আব্দুস শহীদ, আকবর আলী, লাল মিয়া, ফাতির আলী, ইলাছ আলী প্রমুখ। রাজাকারদের নির্যাতনে শহীদ হওয়া বানরাজার মেয়ের জামাই নিমার আলীর পরিবার আজো পায়নি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি। 

বানরাজার মেয়ের ছায়ারুন নেছা (৭০) জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও খাবার দেওয়ার অপরাধে আমার স্বামীকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে অনেক নির্য়াতন করেছিল। এই নির্যাতনের পর আর তিনি সুস্থ হননি। দেশ স্বাধীনের কয়েক মাস পর তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান। 

তিনি আরো জানান, আমার বাড়ির টিনের চাল যুদ্ধেও গুলিতে এখনো ফুটু রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমার স্বামী শহীদের স্বীকৃতি পাননি। সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকেও বি ত তিনি। আর কিছু না হলেও শহীদ পরিবারের নাম তালিকাভুক্তির জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী সহ কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান।
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ