বিজ্ঞাপন
ডা. শাহজাদা সেলিম : রোজার সময় একজন মানুষকে ভোররাত থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হয়। ভৌগোলিক অবস্থান ও মৌসুম ভেদে এ সময়কাল ১৪ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০-২১ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখার সময় সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে খাদ্য ব্যবস্থাপনায়।
যেমন : সাহরির খাবার সাহরির শেষ সময়ের অল্প কিছুক্ষণ আগে খাওয়া, ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করা, ডায়াবেটিস রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যেন তারা পানিশূন্যতায় না ভোগেন। এছাড়া খেজুর খেলে একটা খেজুর খেতে পারেন। ফলমূল, শাকসবজি, ডাল ও টক দই তালিকাভুক্ত করতে পারেন। ডাবের পানি পান করতে পারেন।
খাদ্যের ক্যালরি ঠিক রেখে খাওয়ার পরিমাণ এবং ধরন ঠিক করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ খাওয়া প্রয়োজন।
রমজানের আগে যে পরিমাণ ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতেন রমজানে ক্যালরির পরিমাণ ঠিক রেখে খাবার সময় এবং ধরন বদলাতে হবে। প্রয়োজন হলে নিউট্রিশনিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে খাবার তালিকা ঠিক করে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে ওষুধের সঙ্গে খাবারের যেন সামঞ্জস্য থাকে। ইফতারের সময় অতি ভোজন এবং শেষ রাতে অল্প আহার পরিহার করুন।
এক্ষেত্রে করণীয় বিষয়সমূহগুলো : প্রত্যেক রোজাদার ডায়াবেটিস রোগীর অবস্থা তার স্বাতন্ত্র্যসহ বিবেচনা করতে হবে। ঘন ঘন রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা দেখতে হবে। প্রতিদিন বেশ ক’বার (কম পক্ষে তিনবার) রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখতে হবে। শেষ ভাগে অবশ্যই রক্তের গ্লকোজ দেখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে খুব সতর্কতার সঙ্গে রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্যের পুষ্টিমান অন্যান্য সময়ের মতোই রাখার চেষ্টা করতে হবে।
স্বাভাবিক দৈহিক ওজন ধরে রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে। গবেষণায় দেখা যায়, ২০%-২৫% ডায়াবেটিস রোগীর দৈহিক ওজন কমে বা বাড়ে। ইফতারে চর্বি সমৃদ্ধ খাদ্য এবং তেলে ভাজা খাবার গ্রহণ করা থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে। কেননা এসব হজম হতে সময় লাগবে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীর ইফতারের পর পরই যত দ্রুত সম্ভব রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ করা ব্যবস্থা করতে হবে। সে জন্য জটিল শর্করা জাতীয় খাবার সাহরির সময় খেতে হবে। আর ইফতারিতে সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে। প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। সেহরির খাবার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ঠিক আগে খেতে হবে এবং তারপর প্রচুর পানি পান করা বাঞ্ছনীয়। শারীরিক শ্রম বা ব্যায়াম স্বাভাবিক শারীরিক কর্মকান্ড চালানো যেতে পারে এ সময়। তবে খুব বেশি কঠোর শ্রম বা ব্যায়াম না করাই ভালো।
এতে করে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। কিছু কিছু ডায়াবেটিস রোগী (বিশেষত টাইপ১) যাদের রক্তের গ্লুকোজ ঠিক মতো রাখা যাচ্ছে না তাদের ক্ষেত্রে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঘটনা প্রায়শ মারাত্মক হয়। প্রতিটি ডায়বেটিস রোজাদারকে একথাটি খুব স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, যখনই হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কোনো লক্ষণ শরীরে দেখা দেয় তার পর যতটা সম্ভব দ্রুততর সময়ের মধ্যে গ্লুকোজ/চিনি/মিষ্টি কোনো খাদ্য/শরবত ইত্যাদি যে কোনো একটি খেয়ে নিতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা।