বিজ্ঞাপন
সাত্তার আজাদ,বিশেষ প্রতিবেদক : সিলেট নগরের বেশিরভাগ হোটেল ও রেস্তোরাঁর পানিতে উচ্চমাত্রার কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া উপস্থিতি রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর হোটেল-রেস্তোরাঁয় সরবরাহ করা খাওয়ার পানির নমুনা পরীক্ষা করে ওই তথ্য পেয়েছে। চলতি জানুয়ারির হিসেবে এখনো নগরের শতকরা ৬০ ভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁর পানিতে এ জীবাণু রয়েছে।
কলিফর্ম জীবাণুর ভয়াবহতা সম্পর্কে ডাক্তার আব্দুছ ছালাম জানান, খাবার এবং পানির মাধ্যমে এ জীবাণু পেটে প্রবেশ করলে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, জন্ডিস ও ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে। পানিতে কলিফর্ম জীবাণুর বিস্তার বেশি হলে সে পানি দিয়ে কুলি করলে মুখে ইনফেকশন হতে পারে।
এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল জানালেন, খাওয়ার পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া মাত্রার চেয়ে বেশি হলে পেটের পীড়া, আমাশয়, ক্রোনিক আমাশয়সহ পানিবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ে যা পরবর্তীতে অন্যান্য রোগের দিকেও যেতে পারে। এ ব্যাপারে হোটেলমালিক এবং গ্রাহকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
সিলেট নগরে খাবার হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসা দিন দিন বাড়ছে। পর্যটন নগরী সিলেটে প্রতিদিন বাইরের মানুষজন আসছে। এতে খাবার হোটেলের চাহিদা বাড়ে। ফলে ব্যাঙের ছাড়ার মত হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ছেয়ে গেছে নগর। সিলেটে ছোট-বড় তিন শতাধিক হোটেল রয়েছে। এসব রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন শত শত মানুষের খাবার পরিবেশন করা হয়। তাই খাবারের সাথে পানির প্রয়োজন কুলিয়ে উঠা কঠিন হয় ব্যবসায়ীদের। এতে তারা বিভিন্ন উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার চালায়। কোনো কোনো হোটেলে পুকুরের পানি ব্যবহার করা হয়। এসব পানিতে সবচেয়ে বেশি কলিফর্ম জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়।
এছাড়া রেস্তোরাঁয় প্লাস্টিক জার বা পাকা করাট্রাংকিতে পানি জমিয়ে রাখা হয়। এসব নিয়মিত পরিস্কার করা হয়না। কোথাও মাসের পর মাস জার বা ট্রাংকি পরিস্কার না করায় তাতে ময়লা জমে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বাড়িয়ে তুলে। সিলেট সিটি করপোরেশনের লাইনের পানিতেও কলিফর্ম জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়। সিটি করপোরেশনের লাইন নগরের ড্রেনের পাশ দিয়ে চলে গেছে। এসব লাইন লিকেজ হয়ে ড্রেনের পানির সাথে মিশে যায়। ফলে ওইসব লাইনে ড্রেনের পানি ঢুকে দূষিত করে। পরিবেশ অধিদপ্তর প্রায়ই পানির নমুনা সংগ্রহ করে বাইয়োমাইক্রোলজি পরীক্ষা চালায়। এতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিত সনাক্ত করে হোলেট-রেস্তোরাঁ ও সিটি করপোরেশনকে নোটিশ প্রদান করলেও কোনো কাজ হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের কনিষ্ঠ কেমিস্ট ছানওয়ার বলেন, সিলেটে খাবার হোটেল-রেস্তোরাঁর পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার আধিক্য শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। আগে সিলেটে এর ভয়াবহতা ছিল। এখন কিছুটা কমেছে। তারপরও এখনো কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার আধিক্য শতকরা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ। গত জানুয়ারি মাসেও মাত্র ৫টি হোটেলের খাবার পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বাইয়োমাইক্রোলজী ল্যাবে পরীক্ষা করে ৫টির মধ্যে ৩টিতেই মাত্রাতিরিক্ত কলিফর্ম জীবাণু পাওয়া যায়। এই তিন হোটেলের বিরুদ্ধে নোটিশ প্রদানের প্রস্তুতি চলছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জানান, নগরের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁর পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এ ব্যাপারে সময় সময় হোটেলমালিক ও সিটি করপোরেশনকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। তবে তিনি দাবি করেন সিলেটের খাবার হোটেলে আগের চেয়ে এখন পানির কলিফর্ম জীবাণুর উপস্থিতি কম। মানুষ সচেতন হচ্ছে। প্রায়জন এখন গভীর নলকূপ বা জারের পানি ব্যবহার করছে। তবে ছোটখাটো হোটেলে বেশি সমস্যা। তারা বিভিন্ন উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে থাকে। এতে ওইসব হোটেলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মিলছে বেশি।
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জানিয়েছিলেন- সিলেটে বিভিন্ন খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন উৎসের পানি ব্যবহার করা হয়। সেসব উৎসের পানিতে থাকে কলিফর্ম জীবাণু। তবে বেশিরভাগ ছোটখাটো হোটেল বা চায়ের টং দোকানে নিম্নমানের উৎসের পানি ব্যবহার হয়। বড় হোটেল গুলোতে এমন ব্যবহার কমেছে। হাতাগাড়িতে করে টিন ভরে এক শ্রেণির মানুষ হোটেলগুলোতে পানি বিক্রি করে। তারা পুকুর জলাশয়ের পানি তুলে নিয়ে আসে। যাতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কলিফর্ম জীবাণুর উপস্থিতি থাকে। সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর প্রদক্ষেপ নিলে এবং বিষয়টিতে গুরুত্ব দিলে ক্ষতিকর কলিফর্মমুক্ত পানি পাওয়া সম্ভব। চলন্ত পানি যেমন নদীর পানিতে কলিফর্ম জীবাণু নেই বলে দাবি তার। কারণ হিসেবে জানান- নদীর পানি সব সময় চলাচল করে। কলিফর্ম জীবাণু বিস্তার ঘটে স্থির বা জমানো পানিতে। যেমন পুকুর বা জলাশয়। নিম্নমানের উৎসের পানি যে সব হোটেলে ব্যবহার হয় সেসব প্রতিষ্ঠানকে এড়িয়ে চলতে জনসাধারণের প্রতি আহবান জানান তিনি।