বিজ্ঞাপন
ফাহিম আহমদ, গোলাপগঞ্জ :: দেশজুড়ে পরিবর্তন হচ্ছে আবহাওয়া। সেইসাথে পরিবর্তন হচ্ছে তাপমাত্রা। আর এ পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের শরীরে দেখা দিয়েছে জ্বর-সর্দি-কাশির উপদ্রব। তাপমাত্রার এ তারতম্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না শরীর। আর এতেই গড়বড় করছে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। এর ফলে গোলাপগঞ্জ জুড়ে ঘরে ঘরে মানুষ জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।
জ্বর-সর্দি-কাশির ফলে মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে আতঙ্ক। অনেকে করোনা মনে করে ডাক্তার দেখাতে ভয় পাচ্ছেন আবার যারা এই সবের কারণে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন তাদের শরীরে মিলছে না করোনা।
গত কয়েকদিন থেকে উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে কমপক্ষে একজনের শরীরেও জ্বরের লক্ষণ দেখা গেছে। জ্বর-সর্দি-কাশি হলে মানুষ একজন আরেকজনের পাশে আসা থেকে বিরত থাকছেন। এতে করে যারা জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত তারা চরম অবহেলার শিকার হচ্ছেন। যার কারণে মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।
কিন্তু চিকিৎসকরা বলেন, এখন ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে। দিনের বেলা গরম, রাতের বেলা কিছুটা ঠান্ডা লাগে৷ এই ঠান্ডা-গরমের সংমিশ্রণের কারণে মানুষের মধ্যে জ্বর-সর্দি-কাশি অনুভব হচ্ছে। এটা প্রতি বছর এই সময়ে স্বাভাবিকভাবে সবার হয়ে থাকে। এতে ভয়ের কিছু নেই। এসময়ে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য যে জ্বর আসে তাতে সাধারণভাবে সবার আগে সর্দি হয়।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩ টায় উপজেলার পৌর এলাকার চৌমুহনীতে ডাক্তার দেখাতে মিনারা বেগম নামে একজন মহিলা ৫ বছরের শিশু রাসেলকে নিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘৩ দিন থেকে বাচ্চার জ্বর-সর্দি। আমার পরিবারের আরও ২ জনের একই অবস্থা। এখন করোনার সময়। ভয় হচ্ছে। তাই বাচ্চাটিকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছি।’
উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা কামাল আহমদ জানান, ‘গত কয়েকদিন থেকে পরিবারের সবাই একজন একজন করে এই রোগে ভুগতেছেন। জ্বর হওয়ার পর শরীরের সব শক্তি কমে যায়৷ শরীরটা অনেক দুর্বল হয়ে যায়।’
এদিকে জ্বর-সর্দি-কাশিতে মানুষে আক্রান্ত হওয়ায় করোনার ভয় থাকলেও নমুনা পরীক্ষা করাতে অনিহা প্রকাশ করছেন উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ। উপজেলায় বাড়ছে না নমুনা সংগ্রহের তালিকা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য মতে এখন পর্যন্ত উপজেলায় মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১ হাজার ৭শত ১টি। এদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ২শত ৯৬ জন। সুস্থ হয়েছেন ২শত ৩৪ জন। আর মৃত্যু বরণ করেছেন ১৩ জন। আইসোলেশনে ভর্তি আছেন ৪৯ জন।
উপজেলার বিভিন্ন ঔষধের দোকান ঘুরে দেখা যায়, মানুষ ডাক্তার না দেখিয়ে জ্বর-সর্দি ঔষধ নিচ্ছেন। প্রত্যেকটি ফার্মেসিতে মানুষের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। ফার্মেসি ব্যবসায়ী মেসার্স এস এস ফার্মেসীর মালিক সালিক আহমদ বলেন, ‘গত কয়েকদিন থেকে জ্বরের ঔষধ বিক্রি হচ্ছে বেশি। জ্বর-সর্দি কাশিতে যে ঔষধ লাগে আমরা সেগুলো দিতেছি।’
চিকিৎসকরা জানান, সাধারণ জ্বর হওয়ার আগে সর্দি দেখা দেয়। নাক দিয়ে পানি পড়ার প্রবণতা তৈরি হয়। করোনা আক্রান্তদের ক্ষেত্রে খুব কমই নাক দিয়ে পানি পড়ার লক্ষণ দেখা গেছে। তবে যেকোনো জ্বরে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তারা।
তারা আরও জানান, বর্তমানে এই জ্বর একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিসহ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য এসব জ্বর ঝুঁকিপূর্ণ।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, প্রতি বার ঠিক এই সময়ে প্রতিঘরেই জ্বরের রোগী থাকে। এই সময়টিতে জ্বর হবে এটা স্বাভাবিক। জ্বর হলে ভয়ের কিছু নেই। তবে যে কোন রোগকে হালকা মনে না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, হঠাৎ অত্যাধিক গরম ও মাঝে মধ্যে বৃষ্টি। এ গরম-ঠাণ্ডায় ভাইরাল জ্বর হচ্ছে। যার কারণে মানুষ না বুঝে আতঙ্কে আছে। যেহেতু এখন করোনার সময় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার কথা। তবে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকরে পরামর্শ ক্রমে ঔষধ সেবন করলে জ্বর শেষ হয়ে যাবে। এই জ্বর সপ্তাহ খানেকের ভিতরে শেষ হয়ে যায়৷
বর্তমানে কোনো জ্বরকেই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় এবং জ্বর হলে ঘর থেকে বের না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকার অনুরোধ জানান তিনি।