Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০
সর্বশেষ সংষ্করণ 2020-04-09T16:36:32Z
গোলাপগঞ্জ

গোলাপগঞ্জে নীরব মসজিদ, ঘর থেকে ভেসে আসছে জিকিরের সুর

বিজ্ঞাপন

ফাহিম আহমদ::  সকাল থেকেই শুরু হয় বাজারে ভিড় আর গ্রামে গ্রামে কবরস্থান পরিষ্কার করা। স্থানীয় ভাবে কয়েকজন মিলে হয় গরু জবাই। সব চাপিয়ে বিকাল হতেই গ্রামের রাস্তায় মুসল্লিদের আনাগুনা বাড়ে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে আগরবাতি হাতে শিশুপ্রাণ দলে দলে ছুটে এক গুরুস্থান থেকে অন্য গুরুস্থানে। বড়রাও স্বজনদের কবর জিয়ারত করেন। মসজিদেও থাকে মুসল্লিদের ভিড়। রাত গভীর হতে শুরু হয় জিকির। 'আল্লাহ, আল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মদুর রাসুল আল্লাহ' ইত্যাদি নানা সুরের জিকির হয় মসজিদগুলোতে। এটি যেন গোলাপগঞ্জবাসীর জন্য অতি পরিচিত অতীত। শবেবরাতে উপজেলার সকল জায়গায় এমন দৃশ্য আগে দেখা গেলেও এবার ঠিক উল্টোচিত্র।

এবার গোলাপগঞ্জে নীরবেই কাটছে শবেবরাত। মসজিদে নেই মুসল্লিদের ভিড়। মাইকেও নেই ওয়াজের সুর। কেবল পাড়ায় মহল্লার ঘর থেকে ভেসে আসছে জিকিরের সুর। এ যেন অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ঘরে বসেও ভাগ্য নির্ধারক রজনীতে প্রার্থনা। সেই সাথে আছে করোনা মুক্তির আহাজারি।

বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর থেকেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে গোলাপগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। তবুও সময়ে সময়ে করোনার বিস্তার বাড়তে থাকায় দেশের সকল মসজিদে জামায়াতে নামাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে ভাগ্য নির্ধারক রজনীতে ঘরে থেকেই ইবাদত করতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সরকারের এমন নির্দেশনা ও করোনা আতঙ্কে অনেকটা স্বেচ্ছায় গৃহবাসী গোলাপগঞ্জের মানুষ এবার নিজ গৃহকেই এবাদতখানা হিসেবে নিরাপদ ভাবছেন। তাইতো আতঙ্কিত মনে আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও মহামারী করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে ঘরে বসেই প্রার্থনা করছেন। 

এদিকে সরেজমিনে উপজেলার সর্ববৃহৎ কবরস্থান 'ফুলবাড়ি বড়মোকাম' ঘুরেও দেখা গেছে নেই জনসমাগম। শবেবরাতের সময় এ কবরস্থানে যেখানে মুসল্লিদের ঢল নামে সেখানে স্থানীয় কিছু মুসল্লিরাই নিজেদের স্বজনদের কবর জিয়ারত করছেন নীরবে দাঁড়িয়ে। অতীতের মতো কবরস্থান লাগোয়া মসজিদেও নেই ওয়াজ মাহফিল। একই দৃশ্য প্রায় ঢাকাদক্ষিণস্থ কানিশাইল এলাকার বড়মোকামেও। এখানে কিছুটা মানুষের আনাগুনা থাকলেও সকলেই জিয়ারত শেষ করেই সরে যাচ্ছেন। জিয়ারতে সময়ও নিচ্ছেন খুব কম। পুরো এলাকার মানুষের জন্য এ কবরস্থান হওয়ায় এখানে স্থানীয় লোকজনই স্বজনদের কবর জিয়ারত করছেন। তবে অন্য এলাকার মুসল্লিদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। 

এসময় কথা হয় শাহনুর মিয়া নামের একজনের সাথে। তিনি বলেন, করোনা আতঙ্ক। তাই ঘর থেকে বের হওয়া নীরাপদ না। তবুও এখানে আমার স্বজনদের কবর। তাই সুবিধা বুঝে দূরত্ব বজায় রেখে জিয়ারতটা করেই চলে যাচ্ছি। বলাতো যায় না কখন কি হয়।

সব মিলিয়ে গোলাপগঞ্জে শবেবরাতে নেই সেই চিরচেনা দৃশ্য। মানুষ এখন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী। ঘরে থেকেই জিকির আর ভাব গম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে পালন করছেন ভাগ্য রজনী। সেই সাথে মহামারী করোনার হাত থেকে বিশ্বের মুসলিম উম্মাহের মুক্তি আর সকলের শান্তির প্রার্থনা করছেন।
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ