বিজ্ঞাপন
সারাদেশের মধ্যে সিলেট মহানগরীতে প্রথম বিনামূল্যে ওয়াইফাই সেবা চালু হয়েছে। ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্প’ এর আওতায় নগরীর ৬২ এলাকায় ১২৬টি এক্সেস পয়েন্টের (এপি) মাধ্যমে এ সেবা চালু করা হয়েছে।
প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মধুসূদন চন্দ জানান, গত কিছুদিন ধরে পরীক্ষামূলক হিসাবে এ ওয়াইফাইয়ের কার্যক্রম চালু ছিল। গত শুক্রবার থেকে এটি পুরোদমে চালু হয়েছে। এসএসআইডি পদ্ধতিতে ব্যবহারকারী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং পাসওয়ার্ড ‘জয় বাংলা’ লিখে বিনামূল্যে যে কেউ এ সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
তিনি বলেন, গত দু’মাস ধরে ওসিসি পদ্ধতিতে সিলেটে পরীক্ষামূলকভাবে ওয়াইফাই চালু হয়। এতে সংযোগ পেতে সময় লাগতো। তাই, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলকের নির্দেশে গত ১০ মার্চ থেকে এসএসআইডি পদ্ধতিতে চালু করা হয়েছে এবং এখন নগরবাসী পুরোদমে এটি ব্যবহার করতে পারছেন। পর্যটকরাও বিনামূল্যে এ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। সিলেট মহানগরী ছাড়াও একই প্রকল্পের অধীনে কক্সবাজারে ৩৫টি পয়েন্টে ৭৪ এপি স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে মধুসূদন চন্দ বলেন, ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ প্রতিমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করেছেন।
৩০ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরে সিলেট নগরীর ডিজিটাইজেশন কাজটি বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। গত বছরের জুনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্পের পাইলটিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ডিজিটালের পথে আরেকধাপ এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ। ওয়াইফাই চালুর বিষয়টি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে কিনা সে ব্যাপারে ওই কর্মকর্তা নিশ্চিত কোন তথ্য জানাতে পারেননি।
‘আইপি ক্যামেরা বেইসড সার্ভিলেন্স সিস্টেম’ এর অধীনে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নজরদারির জন্য নতুন করে ১১০টি আইপি ক্যামেরা (ইন্টারনেট প্রটোকল ক্যামেরা) স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ ধরণের ১০টি ফেস রিকগনিশন (এফআর) বা ব্যক্তি সনাক্তকরণ এবং ১০টি অটো নাম্বার প্লেট রিকগনিশন (এএনপিআর) তথা যানবাহনের নাম্বার প্লেট চিহ্নিতকরণ ক্যামেরা রয়েছে। যা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি দেখাশোনা করছে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)। প্রকল্পের সহকারী পরিচালক বলেন, ইতোমধ্যে নগরীর ৫০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৩৬০ ডিগ্রি জুমিং সুবিধাসম্পন্ন আইপি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
এসএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. জেদান আল মুসা বলেন, নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত আইপি ক্যামেরাগুলো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর সুফল ইতোমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। অপরাধীদের দ্রুত ধরার ক্ষেত্রে পুলিশ এসব ক্যামেরার ব্যবহার করতে পারছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ এর উদ্যোগ আরো কয়েকধাপ এগিয়ে নিতে ২০১৭ সালে পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের প্রথম ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হবে আগামী জুন মাসে। প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে প্রকল্পের সহকারী পরিচালক বলেন, আইপি ক্যামেরা ও ওয়াইফাই ছিল প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখন কেবল হাসপাতাল অটোমেশনের কাজ বাকি রয়েছে। ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে উন্নত বিশে^র মতো কম সময়ে, অতি সহজে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন সিলেট নগরীর বাসিন্দারা।
বিনামূল্যে ওয়াইফাই সুবিধার আওতায় এসেছে- নগরীর চৌকিদেখি, আম্বরখানা পয়েন্ট, দরগা গেইট, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার ফুটওভার ব্রিজ এলাকা, হাসান মার্কেট, সুরমা ভ্যালি রেস্ট হাউস, সার্কিট-হাউস জালালাবাদ পার্ক এলাকা, ক্বিন ব্রিজের দুই প্রান্ত, রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল, কদমতলী এলাকা, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, আলমপুর পাসপোর্ট অফিস, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, সিলেট শিক্ষাবোর্ড, রোজভিউ পয়েন্ট, শাহজালাল উপশহর ই-ব্লক ও বি-ব্লক, টিলাগড় পয়েন্ট, এমসি কলেজ এলাকা, শাহী ঈদগাহ, কুমারপাড়া, দক্ষিণ বালুচর, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এলাকায়।
এছাড়াও সিলেট নগরীর নাইওরপুল, মিরাবাজার সড়ক, রায়নগর, সোবহানীঘাট পুলিশ স্টেশন, বঙ্গবীর ওসমানী শিশু উদ্যান, বন্দরবাজার জামে মসজিদ, নয়াসড়ক পয়েন্ট, কাজীটুলা, চৌহাট্টা, হাউজিং এস্টেট, সুবিদবাজার, মিরের ময়দান, পুলিশ লাইন সড়ক, জেলা স্টেডিয়াম, মদন মোহন কলেজ, মির্জাজাঙ্গাল, পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট, খুলিয়াপাড়া, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, হোটেল গুলশান, কাজিরবাজার সেতু, কাজিরবাজার, সিলেট টেকনিক্যাল কলেজ এলাকা, বাগবাড়ি, পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট, শাবি গেইট এবং ওসমানী মেডিকেল কলেজ এলাকায় এক এবং একাধিক এক্সেস পয়েন্ট রয়েছে।
প্রতিটি সেকেন্ডে এক্সেস পয়েন্টের চতুর্দিকে ১০০ মিটার এলাকায় ব্যান্ডউইথ থাকবে ১০ মেগাবাইট বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তা।
কয়েকজন নগরবাসী জানিয়েছেন, আম্বরখানাসহ নগরীর কয়েকটি পয়েন্টে চেষ্টা চালিয়েও তারা ওয়াইফাই সুবিধা পাননি। এ বিষয়ে প্রকল্পের সহকারী পরিচালক জানিয়েছেন, নগরীতে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ লাইন টানার কারণে ৮/৯টি পয়েন্টে ওয়াইফাই পেতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া বাকি সবকটি পয়েন্টে ওয়াইফাই ঠিকমতো কাজ করছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।