বিজ্ঞাপন
দেবকল্যাণ ধর বাপনঃ একদিকে প্রবাসী অধ্যুষিত তার ওপর সীমান্তবর্তী এলাকা- তাই সিলেটকে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে ঝুঁকিতে থাকলেও সিলেটে নেই করোনাভাইরাস সনাক্তের কোনো ব্যবস্থা। এই ভাইরাস সনাক্তের জন্য যে কীট প্রয়োজন তা নেই সিলেটের হাসপাতাল ও প্যাথলজিক্যাল সেন্টারগুলোতে। তাই সিলেটে সন্দেহভাজন রোগী এলে তাদের রক্তের নমুনা পাঠাতে হয় ঢাকায়। ফলে করোনা মহামারি আকার ধারণ করলে তা মোকাবেলা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত রোববারই সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী এক সেমিনারে বলেছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় দেশে করোনাভাইরাসের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট।
সিলেট সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে কেবল রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)-এ করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে সিলেটে সন্দেহভাজন কাউকে পেলে রক্তের নমুনা পাঠানো হয় ওই প্রতিষ্ঠানে। তারা পরীক্ষা করে জানান ওই রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে কি না।
সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, সিলেটের শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে বাংলাদেশের কোনো জেলায় করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ও পরীক্ষার সুযোগ নেই। করোনাভাইরাস পরীক্ষায় যে কিটের প্রয়োজন তা সিলেটে নেই। কিটের চাহিদাপত্র পাঠানোর বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে সময়মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে বলেও জানান তারা।
এদিকে আইইডিসিআর সূত্রে জানা যায়, সন্দেহভাজন রোগীর মুখের লালা ও নাকের শ্লেসা সংগ্রহ করে টিউবে অতিমাত্রায় শীতল করে বরফের বাক্সে ভরে পাঠানো হয় ঢাকার ল্যাবরেটরিতে, সেখানে টেস্ট কিট দিয়ে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়। রোগীর নমুনায় যদি করোনাভাইরাসের উপস্থিতি থাকে, তাহলে এ পরীক্ষায় তার সংখ্যা বাড়বে এবং ফলাফল আসে ‘পজিটিভ’।
এদিকে করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে থাকা সিলেটে সনাক্তের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিলেটের সচেতন সমাজ। তারা মনে করছেন যেকোনো মুহূর্তে সিলেটের করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সমস্যার মুখে পড়তে হবে ভাইরাসে আক্রান্তদের। একইসাথে রোগী সামলাতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিমশিম খেতে হতে পারেও ধারণা করছেন তারা।
সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সিলেটে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি ও সর্দি নিয়ে ১০ থেকে ১৫ জন রোগী আসেন সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি-না তা পরীক্ষা করাতে। তাদের মধ্য থেকে চিকিৎসকরা যাদের সন্দেহভাজন করোনায় আক্রান্ত মনে করেন তাদেরকে করোনা আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি রেখে আইইডিসিআরের সাথে যোগাযোগ করে। পরে তাদের ব্লাড স্যাম্পল কালেকশন করে ঢাকায় পাঠিয়ে সেখান থেকে রিপোর্ট করিয়ে এনে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এ ব্যাপারে সিলেট শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বলেন, শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ১০০ বেডের করোনা আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছে। এখানে করোনাভাইরাসে সন্দেহজনক রোগী মিললে প্রথমে তাকে নির্দিষ্ট ইউনিটে পাঠানো হয়। পরে চিকিৎসকরা রোগীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পরীক্ষার নিরীক্ষার প্রয়োজন মনে হলে আইইডিসিআরকে জানানো হয়। তাদের সিলেটে থাকা প্রতিনিধিরা রোগীর রক্ত সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠান। পরে তারা করোনার বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করেন। করোনার প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য সিলেটে প্রস্তুতি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, করোনা সন্দেহে যারা সিলেটের আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি আছেন তাদের কারো শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত শনিবার ও রোববার দুইজনকে আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করা হয়। তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নেই এবং তারা দুজনেই ভালো আছেন।
এছাড়া রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমাদের করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল জানিয়েছেন, ঢাকার বাইরে দেশের অন্য কোনো জেলায় করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কিটের সরবরাহ নেই। আইইডিসিআরের নির্দেশনা ও প্রয়োজন মনে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কিটের চাহিদাপত্র পাঠানো হবে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সিলেটে এখনো পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী মেলেনি। সন্দেহজনক কোন রোগীর তথ্য পেলে তা আইইডিসিআরে জানানো হয়। তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমাদের কাছে রিপোর্ট পাঠালে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি।