বিজ্ঞাপন
জিভি২৪ ডেস্ক: হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে পারিবারিক বিরোধের জেরে পিতাকে গলা কেটে হত্যার পর মাথা নদীতে ফেলে দেয় পুত্র ও তার সহযোগীরা। পরে নিজেই পিতা নিখোঁজ উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। পরবর্তীতে ছেলের অস্বাভাবিক আচরণের সূত্র ধরে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। ছদ্মবেশে সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ থেকে আটক করা হয় ভাড়াটে খুনি মনির আহমেদ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত তার শ্বাশুড়ি সুফিয়া খাতুনকে।
বুধবার বিকেলে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বুধবার রাতে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, গত ৬ জানুয়ারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের কুমেদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সিলেট এমসি কলেজে অনার্স ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত কাউসার আহমেদ তার বাবা উমর আলী নিখোঁজ হয়েছেন বলে আজমিরীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এতে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে উমর আলীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা আজমিরীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবু হানিফ বিভিন্ন সময় ছদ্মবেশে গিয়ে জানতে পারেন সাধারণ ডায়েরির পর থেকেই উমর আলীর ছেলে কাউসার বাড়িতে থাকা গরু বিক্রি করতে থাকে। এছাড়া জায়গা-সম্পত্তির কাগজপত্র হাতিয়ে নেয় সে।
এদিকে গত ২৩ জানুয়ারি উমর আলী’র ভাই নায়েব আলী বাদী হয়ে উমর আলীর ছেলে কাউসার আহমেদ (২০), কাউছারের মা পিপি বেগম (৫৫), মেয়ে মমতা বেগম (৩০), অপর ছেলে আল-আমিন (২৫) ও ভাতিজা সাদেক মিয়া (৪৫)কে আসামি করে আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি থানার আসার পর পুরো উদ্যোমে শুরু হয় তদন্ত।
গোয়েন্দা তৎপরতা ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশ নিশ্চিত হয়, উমর আলী নিখোঁজের পর থেকে সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভার নয়াগ্রাম এলাকার এমাদ উদ্দিনের ছেলে মনির আহমেদ (৩০) এর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে উমর আলীর ছেলে কাউসার। এর পর থেকেই মনিরকে গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ছদ্মবেশ ধারণ করে কয়েকদিনের চেষ্টায় গত মঙ্গলবার জকিগঞ্জের সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় মনিরকে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, সিলেটে তার সাথে কাউসারের পরিচয় হয়। সেখানেই উমর আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। চুক্তি হয় ৫ হাজার টাকায়।
পুলিশ জানায়, ঘটনার সূত্রপাত হাজী উমর আলীর ২য় বিয়ে থেকে। ২য় স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকায় ১ম স্ত্রী কাউসারের মা পিপি বেগম বাদী হয়ে উমর আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৩১ জানুয়ারি মোবাইল ফোনে মামলা আপোষের কথা বলে বাড়ি থেকে উমর আলীকে নিয়ে যায় সিলেটে। সেখান থেকে নেয়া হয় বিয়ানীবাজার উপজেলার কালাইছড়া গ্রামে মনির আহমেদের শ্বশুর বাড়ির পাশে একটি টিলায় নিয়ে যায় উমর আলীকে। সেখানে মনিরসহ অন্যান্য ঘাতকরা উমর আলীকে জবাই করে তার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে তারা। পরে পরিচয় যাতে সনাক্ত না হয় সে জন্য মাথাটি পার্শ্ববর্তী সোনাই নদীতে ফেলে দেয়া হয় আর লাশ পড়ে থাকে টিলায়।
মনিরের এ তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার দুপুরে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থলে যান তদন্তকারী কর্মকর্তা। গত ২১ জানুয়ারি ওই টিলা থেকে লাশের কঙ্গাল উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে ১টি লুঙ্গি ও ১টি কালো জ্যাকেট জব্দ করা হয়। পরে ডিএনএ সংরক্ষণ করে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের সহায়তায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে করা হয় দাফন। মঙ্গলবার লুঙ্গি ও জ্যাকেট নিহত উমর আলীর বলে সনাক্ত করে ঘাতক মনির। এ ঘটনায় মনিরকে সহযোগিতার অভিযোগে তার শ্বাশুড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার কালাইউড়া গ্রামের মৃত জুবেদ আলীর স্ত্রী সুফিয়া খাতুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার জানান, ঘাতক ছেলে কাউসারকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলার ৫ আসামিসহ ঘটনার সাথে আরো কেউ জড়িত রয়েছে কি না এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই সবকিছু বলা হচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোঃ সেলিম, আজমিরীগঞ্জ থানার ওসি মোশাররফ হোসেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু হানিফসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।